আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
জরুরি ভিত্তিতে চাল-গম আমদানির দরপত্র প্রক্রিয়ার সময়সীমা কমানোর প্রস্তাব
সোহেল রহমান : অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারি উদ্যোগে খাদ্যশস্য ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না-হওয়া এবং করোনাসহ প্রাকৃতিক দুযোর্গের কারণে উৎপাদন কম হওয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ধান ও চালের দাম বাড়ছে। এমতাবস্থায় সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ খাদ্যের নিরাপত্তা মজুদ বাড়াতে জরুরী ভিত্তিতে চাল-গম আমদানির উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়ার সময়সীমা কমানোর প্রস্তাব করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বুধবার অনুষ্ঠেয় ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
জানা যায়, সরকার ঘোষিত ধান ও চালের মূল্য বাজার দরের তুলনায় কম হওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গত বোরো মৌসুমে ধান ও চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। চলতি আমন মৌসুমেও এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে মনে করছে খাদ্য বিভাগ। খাদ্য বিভাগের হিসাব মতে, গত বোরো মৌসুমের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। এছাড়া চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ মেট্রিক টন ধান ও সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গত ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৭ হাজার ৫৬৭ মেট্রিক টন ধান ও ৫২ হাজার ২৭৬ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
সূত্রমতে, গত ৩ ফ্রেরুয়ারির হিসাবে, সরকারি সংরক্ষণাগারে ৫ লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন গম রয়েছে। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই ২০২০ থেকে জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত) সরকারি উদ্যোগে ১০ লাখ ৩৮ হাজার ৯১০ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লাখ ৭৩৫ মেট্রিক টন গম বিতরণ করা হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত আরও প্রায় ৮ লাখ ২৫ হাজার ৯৯৯ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ ৮৯ হাজার ৪৪৩ মেট্রিক টন গমের প্রয়োজন হবে। এ প্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছর শেষে অর্থাৎ আগামী জুন শেষে খাদ্যের নিরাপত্তা মজুদ হিসাবে প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ মেট্রিক টন গম থাকা অবশ্যক। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ের জন্য আরও ১১ লাখ ৬ হাজার ৮৫৮ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লাখ ৪২ হাজার ৬৭১ টন গম প্রয়োজন।
সূত্রমতে, বিপুল পরিমাণ এ চাহিদার বিপরীতে সাম্প্রতিক সময়ে ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র একাধিক বৈঠকে ভারত ও মিয়ানমার থেকে সরকারি পর্যায়ে (জি-টু-জি) ও আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল ও দেড় লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় এখনো প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা প্রয়োজন। খাদ্য বিভাগ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যশস্য আমদানির ক্ষেত্রে ১০দিন সময় দিয়ে দনপত্র আহবান করা হচ্ছিল। কিন্তু এতে সরকারের ক্রয় বিধির ব্যত্যয় হওয়ায় বর্তমানে এ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে। বিধি মোতাবেক, দরপত্র আহ্বানের পর কমপক্ষে ৪২ দিন সময় দেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যশস্য আমদানির ক্ষেত্রে দরপত্রের এ সময়সীমা শিথিল চায় খাদ্য বিভাগ।
এদিকে সরকারের খাদ্য মজুদ কমে আসা এবং অন্যদিকে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে বন্যা, অতি বৃষ্টি ও ঘুর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে এবার খাদ্যশস্য উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে ধান ও চালের মূল্যে ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে খাদ্য বিভাগের প্রস্তাবে বলা হয়েছে।