সূচক ওঠানামা শেয়ারবাজারের ধর্ম আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই
অধ্যাপক আবু আহমেদ
আমিরুল ইসলাম : শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য ভালো শেয়ার বাজারে নিয়ে আসা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সূচক ওঠানামা করা শেয়ারবাজারের ধর্ম। ২০০ পয়েন্ট বাড়বে আবার ১৫০ পয়েন্ট পড়ে যাবে। অতীতেও এরকম হয়েছে। এগুলো নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার তেমন কোনো কারণ আমি দেখি না।
বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের হাতে কোনো যাদুকরী মন্ত্র নেই যে তারা যাদু করে এটাকে ঠিক রাখবেন। আমাদের সমস্যা হচ্ছে সূচক উপরের দিকে যাওয়ার পর আবার পড়লেই সব ব্যথা শুরু হয়ে যায়। গণমাধ্যমগুলো বড় বড় করে প্রতিবেদন ছাপে। এগুলো ঠিক নয়। বাংলাদেশের শেয়ারবাজার তেমন আহামরি কিছু নয়। এখানে বিনিয়োগকারী কম এবং ভালো শেয়ারের অভাব আছে। ভালো শেয়ারের অভাব নিয়ে উপরের মহল থেকে কেউ কিছু বলে না। ভালো শেয়ার কীভাবে আনা যায় লিস্টিংয়ে সেটা দেখার কেউ নেই।
খারাপ কোম্পানিগুলো তদবির করে শেয়ারবাজারে যুক্ত হয়। দুই বছর যেতে না যেতেই তাদের ইনকাম হাওয়া হয়ে যায়। এ বছর অনেকগুলো কোম্পানি ৩ শতাংশ, ৫ শতাংশ এবং ১ শতাংশ ডিভিডেন্ট দিয়েছে, এটা কী মশকরা নাকি। আমাদের শেয়ারবাজারে এমন কোম্পানির সংখ্যাই বের্শি। ৩০০-এর বেশি কোম্পানি আছে। এখানে সংখ্যা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে এগুলোর মধ্যে কয়টা কোম্পানিতে ২-৫ বছর বিনিয়োগ করে রাখা যাবে।
টেক্সাটাইল সেক্টরে দুর্ভিক্ষ লেগেছে, অথচ তারা প্রিমিয়ামে অনেকগুলো টাকা নিয়েছে। কেউ ২৫ টাকা, কেউ ৩০ টাকা ও কেউ ৪৫ টাকা করে নিয়েছে। সেসব শেয়ার এখন ওয়ান-থার্ড। ওয়ান-থার্ডে আসা বড় কথা নয়। তারা কি ডিভিডেন্ট দিচ্ছে সেই অনুযায়ী। দেয় না। শেয়ার বিক্রির সময় তারা দেখিয়েছিলো আমি খুব ভালো আছি। শেয়ারবাজারে এরকম ফাউল প্লে হচ্ছে এবং অবিশ্বাসের জায়গা তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যেই শেয়ারবাজার চলবে। এটা আমাদের শেয়ারবাজার বা অর্থনৈতিক সিস্টেমের অংশ।
বড় কোম্পানিগুলোকে কিছু সুবিধা যদি দিতে হয় লিস্টিংয়ে আনার জন্য, সেটা দিতে হবে। বড় কোম্পানি যদি বলে, একটা সুবিধা আমাকে দেন। আমি কেন জনগণের কাছে আমার মালিকানা বিক্রি করবো। ১০ শতাংশ মালিকানা বিক্রি করলে শেয়ারবাজারে লিস্টিং হয়। এর জন্য কোম্পানি কোনো সুবিধা চাইলে সরকার দিক না যদি ভালো কোম্পানি হয়। বড় কোম্পানিগুলোকে কিছু কর সুবিধা দেওয়া হোক না। কিন্তু সেটা তো সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন দিতে পারবে না। তাদের দোষ দিয়েও লাভ নেই। অর্থমন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু তারা তো চুপচাপ, সেখানে সুনসান নীরবতা। ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যাল সেক্টরে বাংলাদেশে দুই নম্বর কোম্পানি। তারা শেয়ারবাজারে নেই কেন। এখন তাদের জিজ্ঞেস করলে বলবে, তাদের টাকার দরকার নেই। সরকার যদি বলে আপনাকে পাবলিক ইন্টারেস্টে আসতে হবে, জনগণের স্বার্থে আপনাকে আসা উচিত। তখন ইনসেপ্টা বলবে, আমাকে করের ক্ষেত্রে ছাড় দিন। এখন এই কর ছাড় তো সিএসি দিতে পারবে না। অন্য দেশে কর্পোরেট ইনকাম ট্যাক্স কমে গেছে অনেক, আমাদের দেশে যত পারছে খালি বাড়াচ্ছে। নীতিগত সাপোর্ট লাগবে। নীতিগত সাপোর্ট ছাড়া ভালো শেয়ারবাজার আশা করা যায় না।