আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা নিষ্পত্তির পর প্রতিবেদন দেওয়া হবে ৬ দেশের ৪০ নাগরিক অভিযুক্ত, প্রস্তুত চার্জশিট
সুজন কৈরী : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলার তদন্ত প্রায় শেষ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ মামলায় বাংলাদেশসহ ৬ দেশের ৪০ ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিটও প্রায় প্রস্তুত করেছে সংস্থাটি। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ফিলিপাইনের নাগরিক। তবে ৫৬১ কোটি টাকা উদ্ধারে নিউ ইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের আদালতে একটি মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর মতিঝিল থানায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা রিজার্ভ চুরি মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তে বাংলাদেশসহ ৬ দেশের ৪০ নাগরিকের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। বাকি দেশগুলো হলো, ফিলিপাইন, চীন, শ্রীলঙ্কা, জাপান ও ভারত। ভারতীয়র নাম শুধু সুইফটার হিসেবে এসেছে। তাদের মধ্যে চীন ছাড়া বাকি দেশগুলো তথ্য দিয়েছে। পুলিশের মাধ্যমে তথ্য দিয়েছে ফিলিপাইন। শ্রীলঙ্কা, জাপান দিয়েছে ইন্টারপোলের মাধ্যমে। তাছাড়া ভারতও নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। সূত্র জানায়, সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন বা সুইফট হচ্ছে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনের একটি মাধ্যম। সুইফট কোড হ্যাকিংয়ের মাধ্যমেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার চুরি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সুইফটার হিসেবে ভারতীয় এক নাগরিকের নাম উঠে এসেছে তদন্তে।
সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল বলেন, এখন পর্যন্ত ৬ দেশের ৪০ জন ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেই চার্জশিট তৈরির প্রস্ততি নিচ্ছি। তার মধ্যে ২৫ জনই ফিলিপাইনের। তাদের তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি মামলার তদন্ত শেষ করেছি। কিন্তু টাকা উদ্ধারের জন্য নিউ ইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের আদালতে একটি মামলা ঝুলে আছে। আমেরিকায় আমাদের ল ফার্ম হায়ার করা আছে। তাদের সঙ্গে আমরা কয়েক দিন আগেও পরামর্শ করেছিলাম। জুরি মিটিং করেছি, আলোচনা করেছি। আলোচনায় পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমেরিকায় আদালতে যে মামলাটা আছে, সেটা আগে নিষ্পত্তি হলে টাকা ফিরিয়ে আনতে সুবিধা হবে। আমরা তাদের সঙ্গে সম্মত হয়েছি। আমরা অপেক্ষা করছি। কেননা, আমরা দেখবো আমাদের পাবলিক ইন্টারেস্ট। কারণ এটি জনগণের টাকা।
সিআইডি প্রধান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে করা মামলা দেখভাল করার জন্য বাংলাদেশের নিয়োগকৃত অ্যাটর্নি আমেরিকায় আছে। তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, মামলাটি নিষ্পত্তি হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। তবু আমরা অনুরোধ করেছি। মামলাটি যেন দ্রুত শেষ করে ফেলা যায়। তবে এটা শেষ হতে প্রায় এক থেকে দেড় বছর সময় লাগতে পারে। ওটা শেষ হলে আমরা চার্জশিট জমা দিবো।
মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, চার্জশিটেটা একদম ন্যারো করে রেখেছি। তদন্তে বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকের সম্পৃক্ততার তথ্যপ্রমাণ তদন্তে উঠে এসেছে। তবে কোনও দেশকে দায় দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। কেননা, ব্যক্তির দায় রাষ্ট্র নেবে না। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন দেশে বসে কাজগুলো করেছিলেন। সেজন্য সেসব দেশের নাম এসেছে। তবে এটার সঙ্গে রাষ্ট্রের কোনও সম্পর্ক নেই। নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয় ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে রিজার্ভের অর্থ চুরির এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পায় সিআইডি।