তেলের দাম কমাতে ভ্যাট প্রত্যাহার করে নির্ধারিত শুল্কারোপ হতে পারে
বিশ^জিৎ দত্ত : সয়াবিন তেল আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহার করে শুল্কারোপের প্রস্তাব করেছে ট্যারিফ কমিশন। বৃহস্পতিবার রাজস্ব বোর্ডে ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে এ প্রস্তাব পাঠানো হয়। অন্যদিকে ভোজ্য তেল আমদানিকারকরা বলছেন, রাজস্ব বোর্ড যদি এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না নেয় তবে ভোজ্য তেলের দাম আরও বাড়বে।
এ বিষয়ে রাজস্ব বোর্ডের সদস্য গোলাম কিবরিয়া জানান, ভ্যাট প্রত্যাহারের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তা ছাড়া সয়াবিন আমদানিতে যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে তা কমালেও বাজারে এর প্রভাব খুব একটা পড়ে না। সাধারণ ক্রেতারা বেশি দামেই তেল কিনেন। মাঝখান থেকে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়।
ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আল বেরুনী জানান, বাজারে তেলের দাম যা বৃদ্ধি পেয়েছে তা আর বাড়বে না। তবে দাম কমাতে কয়েক পর্যায়ে ভ্যাট ও এআইটি প্রত্যাহার করে টন প্রতি নির্ধারিত শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি হলে দাম কমে আসবে। ২০১৯ সালের আগে সয়াবিন আমদানিতে নির্ধারিত শুল্কই ছিল বলে তিনি জানান।
গত ১ মাসে বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটার প্রতি ৩০ টাকা বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। এখন ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৩০ টাকা। গত ডিসেম্বরে খুচরা বাজারে ৫ লিটার তেল কেনা যেত ৫০০ টাকায়। এখন বাজারে ৬৫০ টাকা।
দেশের অন্যতম ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ^জিৎ সাহা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে ১ টন সয়াবিন তেলের দাম এখন ১২০০ ডলার। অক্টোবরে তা ছিল ৭২০ ডলার। এই অবস্থায় তেলের মূল্য বৃদ্ধি ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক বাজরে চীন সয়াবিন আগাম ক্রয় করে ফেলেছে। ব্রাজিল বা যুক্তরাষ্ট্রের বড় খামারগুলো অগ্রীম অর্থ নিয়েছে চীনের কাছ থেকে। তা ছাড়া ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় পাম উৎপাদন কম হয়েছে। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেল বীজের সংকট রয়েছে। এই অবস্থায় তেলের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে এনবিআরকে অবশ্যই শুল্ক কমাতে হবে।
অর্থনীতিবিদ আমিনুর রহমান বলেন, মৌসুমী ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক যোগাযোগ ও নগদ অর্থের কারণে বাজার তার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ি কাজ করছে না। ফলে নিত্যপণ্যে সংকট লেগেই আছে। এই সংকট আসলে রাজনৈতিক অর্থনীতির। শুধু অর্থনৈতিক কলাকৌশল দিয়ে এর সমাধান হবে না। তিনি আরও বলেন, সরকার ভোজ্য তেল স্থানীয় বাজার থেকে ক্রয় করে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রয় করছে। এত বাজারে আরও সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। বড় ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে তেল বিক্রি করছে। তারা বাজারে তেল ছাড়বে কেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের কাজ বাজার অর্থনীতির সঙ্গে যায় না। বরং এর মাধ্যমে একটি বিশেষ গোষ্ঠিকেই আর্থিক সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বিশ^ব্যাংকের কমোডিটি আউটলুকের তথ্য অনুযায়ি, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সয়াবিন তেলের মিলেটের মূল্য কমেছে। গত ডিসেম্বরে ১ টন মিলেটের দাম ছিল ৪৯৬ ডলার। জানুয়ারিতে তা কমে হয়েছে ৪৮৮ ডলার। তবে রিফাইন্ড সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে প্রতিটন ১ হাজার ডলার হয়েছে। দেশে বর্তমানে রিফাইন্ড সয়াবিন আমদানি হয় না বললেই চলে।
ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে, দেশে বছরে ১৪ লাখ টনের মতো পরিশোধিত ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর ৯০ শতাংশই আমদানি হয়। মোট আমদানির ৪০ শতাংশের মতো সয়াবিন তেল। কোম্পানিগুলো অপরিশোধিত তেল আমদানি করে পরিশোধন করে। তারপর তেলের একটি অংশ বোতলে ভরে বাজারজাত করে। বাকিটা খোলা তেল হিসেবে বাজারে ছাড়া হয়।