প্রথম পাতা • লিড ৫ • শেষ পাতা
বিজেআরআই উদ্ভাবিত তোষা পাট ৮ চাষে অনেক বেশি লাভ
মতিনুজ্জামান মিটু : বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বেনাপোল থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার আগে অবস্থিত উপজেলা ঝিকরগাছার কৃষক মো. আব্দুর রাজ্জাক (৩৮)। পাট চাষের সঙ্গে অনেক আগেই পরিচিত। তিনি ২০১৯ সালে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মনিরামপুর উপকেন্দ্র থেকে পাট ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থার প্রশিক্ষণ নেন। তিনি জানান, প্রশিক্ষণের আগে উচ্চফলনশীল পাটের জাত, বীজ নির্বাচন, রোগ, পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সম্পর্কে তার কোনো পরিস্কার ধারণা ছিল না। তিনি সাধারণত ভারতীয় জাতের পাট সেবায়ন এবং মহারাষ্ট্রের পাট (জেআরও ৫২৪) সনাতন পদ্ধতিতে বীজ ছিটিয়ে বপন করতেন। সেজন্য তিনি তার পাট চাষ থেকে আশানুযায়ী ফলন পেতেন না।
এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সমস্যা ও আর্থিক ক্ষতিতে পড়তেন। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর এবছর তিনি বিজেআরআই এর তোষা পাট-৮ (রবি-১) এর বীজ ১বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে লাইনে বপন করেন। এ জমি থেকে তিনি ৫৬০ কেজি পাটের আঁশ এবং প্রায় ১,৪০০ কেজি পাটখড়ি পান। আঁশ ও পাটখড়ি বিক্রি করে উৎপাদন খরচ বাদে তিনি ২৩০০০ টাকা লাভ করেন। একই জমিতে ২০১৮ সালে ভারতীয় জাত মহারাষ্ট্রের পাট (জেআরও-৫২৪) এর বীজ বপন করে উৎপাদন খরচে বাদে ১৩,৫০০ টাকা লাভ করেন। এ সাফল্যের জন্য তিনি বাংলাদেশ বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।পাট একটি কৃষি পণ্য এবং এটি একই সঙ্গে একটি শিল্প পণ্য। যা পরিবেশ বান্ধব। তাই দেশে পাট চাষিদের লাভ এবং পাট আঁশের উৎপাদন বাড়াতে বিজেআরআই উদ্ভাবিত তোষা পাট-৮ (রবি-১) এর চাষাবাদ সম্প্রসারণ করার অনেক সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে। এই জাতের পাটের আবাদ বাড়ালে কৃষকের অনেক লাভ বাড়বে।
এসএসসি পাশ করার পর আর লেখা পড়ার সুযোগ পাননি মো. আব্দুর রাজ্জাক। বাপ দাদার পেশাকেই বেছে নেন। বিজেআরআই উদ্ভাবিত তোষা পাট-৮ চাষাবাদে খুশি। তিনি দুই থেকে আড়াই বিঘা জমিতে এই জাতের পাট চাষ করবেন। তার সাফল্যের খবরে আশপাশের অনেক কৃষকই এবার তোষা পাট-৮ (রবি-১) এর আবাদ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রকাশিত ১০০ কৃষি প্রযুক্তি এটলাসে উল্লেখ করা হয়, বিজেআরআই তোষা পাট ৮ (রবি ১) আগাম উল্লেখযোগ্য জাত। বাংলাদেশে আবাদী পাটের প্রায় ৮০শতাংশই তোষা পাাট। বিজেআরআই উদ্ভাবিত তোষা পাটের আধুনিক জাতগুলো ১২০ দিনে কাটার উপযোগী। ফলে শস্যনিবিড়তা বাড়ানোর জন্য বেশি সময় পাওয়া দুস্কর। এ সমস্যা সমাধানের জন্য বিজেআরআই’র বিজ্ঞানীরা আগাম কাটার উপযোগী উচ্চফলনশীল জাত তোষা পাট-৮(রবি ১) ২০১৯ সালে উদ্ভাবন করেন।
এই জাতের পাটের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্টের মধ্যে রয়েছে; গাছের স্বাভাবিক গড় উচ্চতা প্রচলিত জাতের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার বেশি। গাছের ছালে ফাইবার ব্যান্ডেলের ঘনত্ব বেশি। জাতটি ১০০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে আগাম কাটা যায়। এ জাতটি পাট চাষের যোগ্য বাংলাদেশের সব এলাকার জন্য উপযোগী। প্রচলিত জাত অপেক্ষা ১৫ থেকে ২০% বেশি ফলন হয়। জাতটির জীবনকাল কমের কারণে আগাম কাটার উপযোগী হওয়ায় সহজে পরবর্তী ফসল ফলিয়ে শস্য নিবিড়তা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। একই পরিমাণ বিশেষ করে ক্ষেত্রবিশেষে কম খরচ করে বেশি ফলন পাওয়ায় আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হওয়া যায়।