আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
করোনা বিপর্যয় কাটিয়ে অর্থনীতিতে লেগেছে বসন্তের রঙ
প্রিয়াংকা আচার্য্য : দেশে পঞ্জিকার নতুন নিয়ম অনুসারে গতবছর থেকে পহেলা বসন্তেই উদযাপিত হচ্ছে ভালোবাসার দিবস। কয়েক দশক ধরে এই দুটি দিবস বেশ ঘটা করেই পালিত হয়ে আসছে। এছাড়া আর কয়েক দিন পরই একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দিনটিও উদযাপিত হয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির লালিত্যে। এ তিন দিবসকে ঘিরে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ফুল, চকোলেট, পুতুল, পোশাক, জুতা, উপহার সামগ্রীর কেনাবেচা বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বিক্রি কম থাকলেও করোনার শুরুতে বিক্রির যে গতি ছিলো তা থেকে বেড়ি এসেছে দেশের মার্কেটগুলো। বিশেষ করে পহেলা বসন্ত, ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি এই তিন দিবস উপলক্ষে আরও গতি বেড়েছে। দীর্ঘ খড়া কাটিয়ে আবারও পূর্বের অবস্থায় শীঘ্রই বাজার ফিরবে বলে দিন গুণছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যান্য বছর এ দিবসগুলোকে ঘিরে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকলেও এবার তেমনটা হবে না। তবুও তারা আশা করছেন বিক্রি দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে। যার ফলে গতি সঞ্চার হবে অর্থনীতির। অনলাইনভিত্তিক সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ জানান, করোনার কারণে গত একবছরে অনলাইনে উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এসময় অনলাইনে অর্ডার বহুগুণ বেড়েছে। পয়লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষেও কেনাবেচা বেড়েছে তবে তা আগের বছরগুলোর মতো নয়। ২০২০ সালে অনলাইনে ১৬ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। ২০১৯ সালে ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে অনলাইনে পণ্য বিক্রি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
এদিকে বিক্রি বাড়াতে ই-কমার্স উদ্যোক্তারা পণ্য ভেদে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দিচ্ছেন। ই-কমার্স ব্যবসায়ী অনেকে জানান, ডিসকাউন্টের কারণে তাদের অধিকাংশ পণ্য ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। আর তাদের বিক্রিও বেড়েছে ২০-২৫ শতাংশ। অনলাইনশপ ধামাকা, ইভ্যালি, দারাজ, আলিশামার্ট, ই-ওয়েঞ্জসহ প্রায় সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানও দিয়েছে আর্কষণীয় সব অফার। ১৫ দিনে প্রায় এক লাখ পণ্যের অর্ডার পেয়েছেন বলেন তারা জানান। বসন্ত ও ভালোবাসার প্রথম অনুষঙ্গ ফুল। যুগলরা একে অপরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। তাই শুধু এমন দিনে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ফুল। গতবছর ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনে ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল। তবে এবার ১৮০ থেকে ১৯০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে আশা করছেন ফুল ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কৃষক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দেশে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকার ফুলের বাণিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে মাঠপর্যায়ে যশোরের গদখালি ও সাভারের সাদুল্লাহপুরসহ কয়েকটি স্থানে ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। বাকিটা হবে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য স্থানে। এদিকে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গয়না কিনতে ছাড় দিয়েছে বড় বড় প্রতিষ্ঠান। এসব ছাড়ের কারণে শুধু ভ্যালেন্টাইনসে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার অলংকার বিক্রি হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড ২৭ শতাংশ, আমিন জুয়েলার্স ৩২ শতাংশ, গেমস ওয়ার্ল্ড ৪০ শতাংশ, গীতাঞ্জলী ৩৫ শতাংশ, নিউ হেভেন ৫০ শতাংশ, সাংহাই গোল্ড ৩৬ শতাংশ, আলিফ জুয়েলার্স অ্যান্ড ডায়মন্ড ৩৫ শতাংশ, ফিওর ডায়মন্ড ২৫ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। ইনগোল্ড দিয়েছে বাই ওয়ান গেট ওয়ান অফার।
গতবছর করোনায় নববর্ষ, ঈদ, দুর্গাপূজায় পোশাক-জুতা ব্যবসায়ীরা তেমন বিক্রি করতে না পারায় বসন্তে সরব তারা। পহেলা বসন্ত এবং ভ্যালেন্টাইন্স ডে- তে পোশাক, জুতায় নতুন নতুন ডিজাইন ও কালেকশন নিয়ে হাজির হয়েছেন। দেশীয় ব্র্যান্ড পোশাকের বাজারে সচল আছেন ৬ হাজার উদ্যোক্তা। লেনদেন হয় ১০ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্যবার এ দিবসগুলোতে ৫শ থেকে ৬০০ কোটি টাকার মতো বিক্রি হয়। স্থানীয় পোশাক উৎপাদনকারীরা এবার এরচেয়ে বেশি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে হোটেল-রিসোর্টে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে। এখন পর্যন্ত বুকড হয়ে গেছে ৮০-৯০ শতাংশ রুম। প্যান পেসিফিক সোনারগাও, ঢাকা রিজেন্সি হোটেল, ওয়েস্টিনে থাকছে ছাড় ও বড় আয়োজন। ছাড় রয়েছে হোটেল সারিনা লিমিটেড, লা মেরিডিয়ান, ডোরিন হোটেলস ও রিসোর্টস লিমিটেড, রেনেসাঁ হোটেল গুলশান, ওশান প্যারাডাইজ হোটেল, সায়মান বিচ রিসোর্ট লিমিটেড। ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে কার্ড, রেড হার্টসহ বিভিন্ন আকারের পুতুল, উপহার ব্যাগ ও বাক্স, শোপিস, পারফিউমের ব্যবসাও বেশ জমজমাট। এ দিবসটি ঘিরে শত কোটি টাকার বেশি কার্ড ও উপহার সামগ্রী বিক্রি হয় বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।