আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ২
দুর্বল ব্যাংক আমানত গ্রহণ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারবে না
সোহেল রহমান : বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক চিহ্নিত কোনো ‘দুর্বল’ ব্যাংক নতুন আমানত গ্রহণ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারবে না। একই সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকের ‘অবসায়ন’ বা ‘একত্রিকরণে’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি ‘স্থায়ী কমিটি’ গঠন করা হবে। দেশের ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও ব্যাংক খাতের ওপর জনগণের আস্থা বাড়াতে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের চূড়ান্ত খসড়ায় এসব বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে খসড়াটি ‘বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষ’ কর্তৃক প্রমিতকরণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই এটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।
সূত্রমতে, আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চা ও নীতি অনুযায়ী, ‘উইক ব্যাংক রিকভারি অ্যান্ড রেজুলেশন রিজাইম’-এর আওতায় দুর্বল ব্যাংক পুনর্গঠন, একত্রিকরণ, অধিগ্রহণ ও অবসায়ন প্রক্রিয়ার আইনি ভিত্তি/কাঠামো তৈরির বিষয়টি বৈধ প্রক্রিয়ার সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে ‘দুর্বল ব্যাংক-কোম্পানির ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক নতুন একটি অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে। প্রসঙ্গত বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত ‘দুর্বল’ ব্যাংকের সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক নির্ধারিত পরিমাণে ও হারে এর তারল্য, সম্পদের গুণগত মান, মূলধন সংরক্ষণ ও আয় অর্জনে ক্রমাগতভাবে, যা দুই বছরের অধিক নয়, ব্যর্থ হলে এবং এ পরিস্থিতির কারণে ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে পড়লে এবং অচিরেই ব্যাংকটি আরও সংকটাপন্ন অবস্থায় উপনীত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকটিকে ‘দুর্বল’ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশোধিত খসড়া অনুযায়ী, চিহ্নিত দুর্বল ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক প্রণীত একটি কর্ম-পরিকল্পনার আওতায় পুনর্গঠনের জন্য ব্যাংকটিকে এক বছরের সময় বেঁধে দিতে পারে। পুনর্গঠনকালীন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের লিখিত পূর্বানুমোদন ছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নতুন কোনও ব্যাংক-ব্যবসায় নিয়োজিত হতে বা সম্প্রসারণ করতে পারবে না, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত বাৎসরিক ভিত্তিতে তার ঝুঁকি-ভিত্তিক সম্পদ (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ঋণ বা অগ্রিম) বৃদ্ধি করতে পারবে না এবং নগদ মুনাফা বন্টন করতে পারবে না। সংশোধিত খসড়া অনুযায়ী, ব্যাংকটির নিজস্ব পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক গঠিত স্থায়ী কমিটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে এক একাধিক ব্যবস্থা নিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছেÑ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক-কোম্পানির ব্যবসা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা, ব্যাংক-কোম্পানির পুনর্গঠন, অন্য কোন ব্যাংক-কোম্পানির সহিত একত্রিকরণ, বেইল-ইন, অন্য ব্যাংক-কোম্পানির নিকট সম্পদ বিক্রয় এবং তদ্কর্তৃক দায় গ্রহণ, লাইসেন্স বাতিল ও অবসায়ন। একই সঙ্গে ব্যাংক-কোম্পানির সংকটাপন্ন অবস্থার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। এর আওতায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনধিক ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে।
অন্যান্যের মধ্যে স্বেচ্ছা ঋণখেলাপিদের তালিকা করতে প্রতিটি ব্যাংকে দুটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে খসড়া আইনে। এর মধ্যে একটি কমিটি স্বেচ্ছা ঋণখেলাপিদের শনাক্ত করবে এবং অপর একটি কমিটি তালিকা চূড়ান্ত করবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের সামাজিকভাবে বর্জন করার জন্য রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য খসড়ায় বলা হয়েছে। এর মধ্যে গাড়ির নিবন্ধন নেয়া, বিমানে উঁচু শ্রেণিতে ভ্রমণ এসব খাতে বাধার সৃষ্টি করতে বলা হয়েছে। আইনের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, কোনও ব্যাংক ‘ঋণের আসল বা মূল ঋণ মওকুফ করতে পারবে না।’ প্রচলিত নীতিমালার আওতায় ব্যাংক ইচ্ছা করলে কোনো গ্রাহকের মূল ঋণ মওকুফ করতে পারে। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও