আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরুনোর প্রস্তুতি ৫ বছর সময় পাচ্ছে বাংলাদেশ
বিশ্বজিৎ দত্ত : স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে ৫ বছরের প্রস্তুতিকালীন সুবিধা আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্মসচিব ফরিদ আজিজ জানিয়েছেন, সিডিপির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি। সেখানেই বাংলাদেশের বিষয়টি নির্ধারিত হবে।
উল্লেখ্য, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রস্ততি পর্বে পাঁচ বছর স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধাগুলো চেয়েছে বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় দ্বিতীয়বারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ বা গ্রাজুয়েশনের মানদ- পূরণ ও উত্তরণের সুপারিশ লাভ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সিডিপির কাছে ২০২১ সাল থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদী প্রস্তুতিকালীন সময় চেয়েছে বাংলাদেশ।
১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সিডিপির সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। শর্ত ৩টি হলো,মাথাপিছু আয় ১২৩০ ডলারে উন্নিত করা, মানবসম্পদের উন্নয়ন সূচক ৬৬ থাকা ও অর্থনৈতিক অভঙ্গুরতা।
জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদ- পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সুপারিশ লাভ করে। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় আবারও বাংলাদেশকে এই ৩টি সূচকের পরীক্ষা দিতে হবে। সেখানে উত্তরণ হলে, সিডিপি প্রস্তাব পাঠাবে ইউনেস্কোর কাছে। পরে ইউনেস্কো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার বিষয়টি নির্ধারিত করবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার সময় ছিল ২০২৪ সাল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ প্রস্তুতিকালীন সময় ২০২৬ সাল করার জন্য সিডিপির কাছে সুপারিশ করেছে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠলে সস্তা ঋণ পাওয়া এবং বিভিন্ন রপ্তানি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। ফলে সেই সুবিধাগুলো উত্তরণের প্রস্তুতি পর্বে সময় চাইছে বাংলাদেশ। প্রস্তুতির এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগসুবিধা ভোগ করতে পারবে। তাছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
এ নিয়ে গত রোববার বাংলাদেশস্থ বিভিন্ন দাতা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা। ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি জানান, তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে আশ^স্ত হয়েছেন। তবে জলবায়ু পরিবর্তনে অর্থনৈতিক ঝুঁকি ও অসাম্যের বিষয়ে বাংলাদেশকে আরও কাজ করতে হবে।
এ বিষয়ে সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সিডিপিকে অনুরোধ করেছে ২ বছর সময় বৃদ্ধির জন্য। যেমন নেপাল ২০১৫ সালে সিডিপিকে অনুরোধ করেছিল তাদের উত্তরণের সময় ২০১৮ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়ার। সিডিপি হয়তো বাংলাদেশের সঙ্গে আরও যেসব ১১টি দেশ রয়েছে সবার সময়ই বাড়িয়ে দেবে। সিডিপি বাংলাদেশের পরিস্থিতি রিভিউ করেছে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের অর্থনীতির। তখন কোভিড ছিল না। কিন্তু কোভিডের পরেও বাংলাদেশের অর্থনীতির গতীময়তা রয়েছে। সুতরাং দ্বিতীয় পর্যায়ের ২০২১ সালের রিভিউতে বাংলাদেশের কোন সমস্যা হবে না।
১৯৭১ সালে স্বল্পোন্নত দেশের সংখ্যা ছিল ২৫, যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৪৬-এ। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে এ নাগাদ বতসোয়ানা, কেপভার্দে, মালদ্বীপ, সামোয়া, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি ও ভানুয়াতু উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে।