
প্রথম পাতা • বিনোদন • শেষ পাতা
চলচ্চিত্রে বড়-ছোট বাজেট নিয়ে নানা জল্পনা

ইমরুল শাহেদ : প্রযোজক পরিবেশক সমিতিতে বসে একজন অভিনেতা বেশ জোর গলায় বললেন, ছবির বাজেট লো কি বিগ সেটা শিল্পীদের দেখার বিষয় নয়। তারা কেউ পারিশ্রমিক কম নেন না। ছবির বাজেট কি সেটা শিল্পীদের দেখার বিষয় নয়। তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচ কোটি টাকার ছবিতেও কাজ করেছি, এখন বিশ বা পঁচিশ লাখ টাকার ছবিতেও কাজ করছি। কিন্তু আমার পারিশ্রমিক আমি এক টাকাও কমাইনি।’ এখন অনেকগুলো ছবি নির্মিত হচ্ছে লো বাজেটে। সিনেমা হল সীমিত হয়ে পড়ার পর প্রযোজকরা এই সীমিত বাজার থেকে কিভাবে লাভসহ বিনিয়োগ ফিরিয়ে আনা যায় তার বিভিন্ন পথ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তারই প্রেক্ষাপটে শুরু হয়েছে লো বাজেটে ছবি নির্মাণ।
বেশ কয়েক বছর আগে লো-বাজেটে ছবি নির্মাণের পথ বেছে নেয় চ্যানেল আই। তারা ছবি নির্মাণ করেছেন ত্রিশ থেকে চল্লিশ লাখ টাকার মধ্যে। এটিএন বাংলা এই পথ অনুসরণ করতে গিয়েও পিছিয়ে আসে। এখন উদ্যোগটা নিয়েছে মোহনা টিভি। তারা ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মধ্যে ছবি নির্মাণ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ছবিও নির্মাণ হয়ে গেছে। লো-বাজেট ছবি নির্মাণে ভালোভাবে যাত্রা শুরু করেন পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। তারপরই এই পথে হাঁটতে শুরু করেন পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর। মোহনা টিভির জন্য ছবি নির্মাণ শুরু করেন তিনি। সেখানে দুটি ছবি নির্মাণের পর তাকে ডেকে নেন অভিনেতা ডিপজল। এই অভিনেতা প্রথমে এফআই মানিককে নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করেন। তিনটি ছবির চিত্রনাট্যও লেখা হয়। কিন্তু ডিপজল লো-বাজেটের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এফআই মানিকের কাজ স্থগিত রেখে মনতাজুর রহমান আকবরকে দিয়ে শুরুকরেন লো-বাজেটের ছবি। ইতিমধ্যে একটি ছবির কাজ শেষ হয়েছে।
মনতাজুর রহমান আকবর জানান, তিনি পরের ছবির কাজও শুরু করে দিয়েছেন। মোহনা টিভির ছবির কাজ থেকে ডিপজলের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে আকবরের যুক্ত হওয়ার পর এখন সেখানে কাজ করছেন পরিচালক রাকিবুল ইসলাম রকিব। তিনিও মোহনা টিভির একটি ছবির কাজ শেষ করেছেন। এই লো-বাজেটে ছবি নির্মাণের প্রভাব অন্যান্য প্রযোজকদের উপরও পড়ছে। শাপলা মিডিয়ার কর্ণধার সেলিম খান ১০০টি ছবি নির্মাণ করার পরিকল্পনা করছেন। সেলিম খান বিগ বাজেটে ছবি নির্মাণ করে অভ্যস্ত।
তিনি এই ছবিগুলোর জন্য কি ধরনের বাজেট পরিকল্পনা করছেন সেটা পরিস্কার করে বলেননি। তবে লো-বাজেটের এসব ছবিগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, দু’এক ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সবগুলো ছবিতেই মোটামুটি পরিচিত বা অখ্যাত পারফর্মাররাই কাজ করছেন। মৌ খান, আশিক চৌধুরী, জয় চৌধুরীরাই এসব ছবিতে কাজ করছেন। এসব ছবি নির্মাণের প্রধান লক্ষ্য হলো টিভি প্রিমিয়ার এবং নির্মাণও সে রকম করেই।
সিনেমা হলে মুক্তি দিলে এসব ছবির ভাগ্যে কি ঘটবে সেটা কেউ বলতে পারবেন না। এসব ছবিতে দৃশ্যের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে প্রপস দেওয়া হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় লোকেশনও নেই। ঠোকাই কাজের কেবল চিত্রধারণ করা হচ্ছে বলে একজন নির্মাতা জানালেন। পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু কথায় কথায় বলেন, ‘যেমন অর্থ তেমন পণ্য।’
অভিনেতা অমিত হাসান বলেছেন, ‘এই দুঃসময়ে সকলের উচিত, এই উদ্যোগকে স্বাগত জানানো। কারণ অনেকেই তো এসব ছবির কাজের কারণে কাজ করতে পারছে।’ কিন্তু অনেক পরিচালকই মনে করছেন এসব ছবি দিয়ে বাণিজ্যিক ছবির বাজার নষ্ট করা হচ্ছে। সরকার সিনেমা হল বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সিনেমা হলকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তো বাণিজ্যিক ছবির দরকার হবেই। কেউ কেউ বলছেন, টিভি, অ্যাপস আর ইউটিউব চ্যানেলতো সিনেমা হলের বিকল্প হতে পারে না। বিনোদন শুরু থেকেই সামষ্টিক। এককভাবে কখনো বিনোদন উপভোগ করা যায় না। তাই সিনেমা হলের আর কোনো বিকল্প নেই।
