প্রাণিসম্পদে অ্যান্টিবায়োটিকের ৬০ ভাগ ব্যবহার হয় ডিলারদের পরামর্শে
মতিনুজ্জামান মিটু : বর্তমানে দেশে মানুষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হলো নিরাপদ খাদ্য। দেশে প্রাণিজ আমিষটুকু যখন ভোক্তার কাছে যাবে তা যেন অ্যান্টিবায়োটিক রেসেডিউ মুক্ত থাকে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা প্রাণিস¤পদ দপ্তরের এলডিডিপি’র প্রাণিস¤পদ স¤প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দেশে সবচেয়ে বেশি মাংস আসে মুরগি, বিশেষ করে ব্রয়লার ও সোনালি থেকে। এসব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। শুধুমাত্র দরকারে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
খামারিরা যেসব ডিলারের কাছ থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করেন। তারাই প্রথমে এক বস্তা ওষুধ দিয়ে দেন। যার অধিকাংশই দরকারি নয়। অনেকাংশে তাদের মুনাফার জন্যই এমন করে থাকেন। তারা মুরগিকে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত একটির পর একটি অ্যান্টিবায়োটিক দেন, যার কোনটারই দরকার থাকে না। এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদে যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয় তার ৬০ শতাংশ ব্যবহার হয় ডিলারদের পরামর্শে। যেখানে তাদের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়ার কোনো নিয়ম বা যোগ্যতা নেই। পুরোটাই ব্যবহার হওয়া উচিত ছিলো রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শে। প্রতিটি অ্যান্টিবায়োটিকের একটি নির্দিষ্ট উইথড্রাল পিরিয়ড (শরীরে সক্রিয় থাকার সময়) আছে। অনেক ডিলার ও খামারে এসব মানা হয় না। ফলে একটি ব্রয়লারের ২৫ থেকে ২৮ দিন বয়সেও অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় আর সে এন্টিবায়োটিক শরীরে নিয়েই বাজারে ভোক্তার প্লেটে চলে আসে। এসব এন্টিবায়োটিক রেসিডিউ মানুষের শরীরে এসে তা জীবাণুদের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী করে তোলে। যা এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে মানুষের শরীরের জন্য কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক কমে যাবে।
এমনকি খামার থেকে সংগ্রহ করা ব্রয়লার মুরগি বিক্রির জন্য দোকানে রাখার সময়ও তারা ফিডে বা পানিতে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকে। এসব বিষয়ে সুষ্ঠু তদারকির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বিনা দরকারে এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে খামারির খরচ বেড়ে যায় এবং বাজার পতনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যা একসঙ্গে উৎপাদনের বিষয়টি নিয়েও চিন্তায় ফেলতে পারে।
বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্য সরবরাহ এবং পুষ্টি ঘাটতি দূরীকরণে সারা বিশ্ব নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে দেশের খাদ্য ঘাটতি এখন প্রায় নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেশের মানুষ এখন পুষ্টিকর ও ভালো মানের খাবার খাচ্ছেন। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার জন্য কৃষি বিভাগের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। মানবদেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ছয়টি খাদ্য উপাদানের মধ্যে অন্যতম উপাদান আমিষ, খনিজ লবণ, স্নেহ, ভিটামিন ও পানি সরবরাহ করে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। আমিষের অন্যান্য উৎসের মধ্যে প্রাণিস¤পদ উৎপাদিত আমিষের মান ও গুণাগুণ সবচেয়ে ভালো। জায়গা এবং পরিবেশের নির্দিষ্টতা থাকা সত্তে¡ও বাড়তি খাদ্য চাহিদার জোগান দিতে উন্নত ও আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশি প্রজাতির প্রাণীর চেয়ে শংকর জাতের প্রাণীর মাংস ও দুধ উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। প্রাণিসম্পদের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এ কাজটি সঠিকভাবে করা হচ্ছে।