আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
বাংলাদেশ বাইডেন প্রশাসনের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে
তরিকুল ইসলাম : এশিয়ায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পর বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি ইন্দো-প্রশান্ত কৌশলগত পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছে দেশটির নতুন প্রশাসন।
ঢাকার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশ যাতে করে খাদ্য উৎপাদন, যোগাযোগ ব্যবস্থায় সাফল্য, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত ও সেনা দক্ষতা বৃদ্ধিতে আরও এগিয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে সহযোগিতা করতে চায় দেশটি।
বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিনকেনের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের টেলিফোন আলাপে উভয় দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও গভীর করার উপায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সাধারণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম পূর্তিতে শুভেচ্ছা জানান। পরবর্তীতে এক টুইটে অ্যান্টনি জে ব্লিনকেন শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
অ্যান্টনি জে ব্লিনকেনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রোহিঙ্গা সংকটে পাশে থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যোগ দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য অ্যান্টনি জে ব্লিনকেনকে আমন্ত্রণ জানান।
ড. মোমেন করোনাকালে বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান। এছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি উভয় দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও গভীর করার উপায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সাধারণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। শ্রম ও মানবাধিকারের গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেন উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করতে তিন দিনের সফরে ওয়াশিংটনে রয়েছেন ড. মোমেন। গত মঙ্গলবার চেয়ারম্যান অব দি সেনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটির বৈঠকে যোগ দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, দেশটির সঙ্গে যদি আমাদের সম্পর্ক আরও উন্নত করতে পারি, দিজ ইজ এ উইন-উইন। বাংলাদেশেরও এখন অনেক কিছু অফার করার সুযোগ আছে। এ সফরে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নেতিবাচক প্রচারণা নিয়ে দেশটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেবেন ড. মোমেন।
গত বছরের ১৪ অক্টোবর ঢাকা সফরের সময় তৎকালীন মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগান অনেকটা স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, নয়াদিল্লির চোখে বাংলাদেশকে দেখে না যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকার সঙ্গে সরাসরি অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক চায় দেশটি। বিগানের ঢাকার এনগেজমেন্টের মধ্য দিয়ে অবাধ, মুক্ত, সমন্বিত, শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিওন প্রতিষ্ঠার যে প্রয়াস, যা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কমন ভিশন, তা এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা হবে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশ উভয় দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, রোহিঙ্গা ও মিয়ানমার ইস্যুসহ যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর দ-প্রাপ্ত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরাতে মোমেনের এ সফর বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতার শেষ মুহূর্তেও রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডানফোর্ডের অফিস থেকে এক বার্তায় বলা হয়, ইন্দো-প্রশান্ত কৌশলের অংশ হিসেবে আমরা এমন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, যেখানে কেউই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বা শ্রমিকের অধিকার খর্ব করে অথবা পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত না করে প্রতিযোগিতায় অন্যায় সুবিধা ভোগ করতে না পারে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ফ্যাক্ট শিট বলছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যে ৭২০ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। পোশাকজাত ও টেক্সটাইল দ্রব্যে যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে মূলত কৃষিপণ্য ও মেশিনারি আমদানি করে বাংলাদেশ, যার পরিমাণ ১৪০ কোটি ডলার। যা ২০১৬ সালের চেয়ে ৬৩ শতাংশ বেশি। তবে এরপরও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৪২০ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়ে গেছে বাংলাদেশের। বর্তমানে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশে দেশটির সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ছিল ২৩ শতাংশ। মার্কিন কোম্পানি শেভরন এককভাবে সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে ৫৫ শতাংশ গ্যাস উত্তোলন করে থাকে এই কোম্পানি। রেজা