
প্রথম পাতা • বিনোদন • শেষ পাতা
উন্মোচিত হলো অপারেশন সুন্দরবনের টিজার

সুজন কৈরী : বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে র্যাবের দুঃসাহসিক অভিযান নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘অপারেশন সুন্দরবন’ এর টিজার ও ওয়েবসাইটের উন্মোচিত হয়েছে। মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বহুল আলোচিত এ সিনেমাটি মুক্তির প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে সিনেমার জনপ্রিয় তারকা ও কলাকুশলীদের উপস্থিতিতে চলচ্চিত্রটির টিজার ও ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, সুন্দরবন অঞ্চলটি জলদস্যু আক্রান্ত ছিল। বিশেষ করে মৎস্য আহরণের মৌসুমে জলদস্যুর হাতে হত্যা বা নিপীড়নের স্বীকারের খবর আসতো প্রতিনিয়ত। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর এ ধরনের নির্যাতন নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০১২ সাল থেকে র্যাব অন্যান্য বাহিনীর সহযোগিতায় অভিযান শুরু করে। ধারাবাহিক অভিযানে বিপুল সংখ্যক জলদস্যু গ্রেপ্তার হন এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জলদস্যু র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। গল্পটি যতটা সহজভাবে বলছি, বাস্তবে এতটা সহজ নয়। সেখানকার পরিস্থিতি কতটা চ্যালেঞ্জিং, সেখানে না গেলে বোঝা যায় না। একদিন-দু’দিন পরিবারের সঙ্গে সুন্দরবনে অবকাশ যাপন আর ভেতরে অবস্থান করে জলদস্যুর বিরুদ্ধে অপারেশন পৃথক ঘটনা। জলদস্যুদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযানে র্যাবের একাধিক সদস্য-কর্মকর্তা আহত হয়েছেন, অসুখে আক্রান্ত হয়েছেন। এর পেছনে বহু ত্যাগ আছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন। পুলিশ প্রধান বলেন, পৃথিবীর বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে এখন যেমন শান্ত ও নিবিড়ভাবে পাওয়া যায় সেটা তেমন ছিল না। এখনকার প্রজন্ম বা কয়েক দশক পরের প্রজন্ম হয়তো ভাবতে পারেন সুন্দরবন এমনই। আমাদের দেশের মানুষ বিস্মৃতিপ্রবণ। এর পেছনে যে ত্যাগ-তিতিক্ষা-ভালোবাসা রয়েছে, আমাদের ফোর্সরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অপারেশন চালিয়ে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করেছে, এক সময় মানুষ হয়তো ভুলে যাবে। সেই ভাবনা থেকেই ছবিটি তৈরি। যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম জানতে পারে সুন্দরবন কেমন ছিল, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী করেছে।
সিনেমাটির নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি তৈরি করতে আমাদের বেশি বাজেট লাগেনি। তবে এতে যে লজিস্টিক সাপোর্ট, উপকরণ, অস্ত্র, সুবিধা ব্যবহৃত হয়েছে এগুলো যদি টাকায় ভাড়া করতে হতো তাহলে এটা করতে ৩০-৩৫ কোটি লাগত। সেটা লাগেনি কারণ আমাদের ফোর্স সার্বিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছে। আমরা খুব অল্প বাজেটে কাজ শেষ করেছি। সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী সব বাঙালির মন জয় করতে পারবে আশা প্রকাশ করে সিনেমা ও এর টিজারের সফলতা কামনা করেন তিনি। সিনেমার সব কলাকুশলী ও যারা নেপথ্যের কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানান আইজিপি।
র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, অপারেশন সুন্দরবন চলচিত্র থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের অধিকাংশ জলদস্যু কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত ভিক্টিমদের সহয়তা, আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের পুনর্বাসনসহ উপকূলীয় অঞ্চলের জনকল্যাণে ব্যয় করা হবে। ছবিটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত করণে র্যাবের দুঃসাহসিক অভিযান দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে র্যাব ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ সোসাইটি কর্তৃক নির্মিত অপারেশন চলচ্চিত্রটির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
অনুষ্ঠানের প্রথম ভাগে অতিথিদের বক্তব্য, টিজার ও ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করা হয়। দ্বিতীয় ভাগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এ সময় চিত্রনায়ক জিয়াউল রোশানের অংশগ্রহণে বহুল প্রতীক্ষিত তারকাবহুল ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার ‘প্রেমের চাঁদরে’ ও ‘চাই ঘূর্ণিঝড়ে’ শিরোনামের দুটি গানে নাচ পরিবেশন করা হয়।
চলচ্চিত্রের নির্মাতা দীপংকর দীপন জানান, চলচ্চিত্র সম্পর্কে সব তথ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’-এর ওয়েবসাইট। টিজার ছাড়াও এতে বেশ কিছু ভিডিও থাকবে।
অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, সিআইডি প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান, অভিনয়শিল্পী রিয়াজ, নুসরাত ফারিয়া, সিয়াম আহমেদ, রোশান, তারিন জাহানসহ র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে এক সময় জলদস্যুদের অবাধ বিচরণ ছিল। র্যাবের একের পর এক অভিযানে সুন্দরবন এখন দস্যুশূন্য। র্যাবের এ দুঃসাহসিক অভিযানকে উপজীব্য করেই নির্মিত হয়েছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’। চলচ্চিত্র নির্মাণে যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে র্যাব ফোর্সেস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও থ্রি হুইলারস।
