আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
চামড়া খাতে ৫০০ কোটি ডলারের অধিক রপ্তানি সম্ভব
সোহেল রহমান : বাণিজ্যসচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেছেন, চামড়া বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাত। আমাদের কাঁচামাল ও দক্ষ জনশক্তি রয়েছে। বিভিন্ন দেশে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে। আমাদের সক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারলে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের অধিক মূল্যের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জব্স’ (ইসিফোরজে) প্রকল্পের আওতায় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতের জন্য ‘লিংকেজ ওয়ার্কশপ অন লেদার সেক্টর’ শীর্ষক ওয়ার্কশপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য, দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল, ফুটওয়্যার এবং প্লাষ্টিক খাতের রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য ‘ইসিফোরজে’ নামক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যসচিব বলেন, এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য কাজ করা হচ্ছে। এ সকল সেক্টরে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং রপ্তানি বাড়বে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য প্রস্তুতি প্রয়োজন। রপ্তানি বাণিজ্যে দক্ষতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। রপ্তানি পণ্য সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণ করতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) এবং ‘ইসিফোরজে’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচাল মো. হাফিজুর রহমান। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মো. মমিনুল আহসান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও বিজনেস প্রোমশন কাউন্সিলের সমন্বয়ক মো. আব্দুর রহিম, ‘বাংলাদেশ ফিনিশ লেদার, লেদার গুডস এন্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, ‘বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশন’-এর চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত: দেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাত হলো চামড়া শিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াজাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যমে এদেশের অর্থনীতির চাকা সচল হয়। রপ্তানি খাতে বর্তমানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের অবদান প্রায় ৯ শতাংশ। জিডিপি ও শিল্পোৎপাদনে চামড়ার অবদান যথাক্রমে ০.৬ শতাংশ ও ২ শতাংশ। ২০২১ সালের মধ্যে চামড়া খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০১৭ সালে চামড়াকে ‘প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করেছিল সরকার। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবত এই খাতে কমেছে আয়।
অন্যদিকে চামড়া শিল্পের প্রধান কাঁচামাল চামড়ার দাম গত এক দশকে কমেছে প্রায় অর্ধেক। কিন্তু চামড়া ও চামড়াজাত সব পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ কোটি ৬৫ লাখ পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয় অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। আর এই চামড়ার প্রায় অর্ধেকই পাওয়া যায় কোরবানি ঈদের সময়। করোনা ও বন্যার কারণে এবার কমেছে কোরবানির সংখ্যা, ফলে চামড়া সংগ্রহের পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমেছে। চামড়ার দামও হয়েছে নি¤œগামী। বর্তমানে বিশ্ববাজারে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজার রয়েছে। বিশাল ওই বাজারে বাংলাদেশ মাত্র ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে। উৎকৃষ্ট মানের পশু চামড়া উৎপাদনে বহুকাল ধরে এদেশের সুখ্যাতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে এদেশের পাদুকা ও অন্যান্য চামড়াজাত পণ্যেরও রয়েছে বিপুল চাহিদা।