‘বাজেটে করোনাকালীন অর্থনৈতিক বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে’
শাহিন হাওলাদার : করোনাত্তর অর্থনীতি মোকাবেলায় কেমন বাজেট হওয়া উচিত জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ এই প্রতিবেদককে বলেন, গত বছরের বাজেটে করোনাকালীন অর্থনীতিক সমস্যা ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে সঠিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক ঘাটতি দেখা যাচ্ছে এবং অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা সমস্যা হচ্ছে। অবশ্য, করোনার মহামারীতে এটা অবধারিত ছিলো।
তাই আসছে বাজেটে যদি করোনাকালীন অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব না দেওয়া হয় তাহলে অর্থনৈতিক টানা-পড়েন থেকে মুক্তি মেলা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে রাজস্ব আদায় ও অর্থনীতিক সক্ষমতা বাড়বে না। বিনিয়োগ করতে গেলে সঠিকভাবে রাজস্ব আদায়ের বিকল্প নেই। রাজস্ব আদায়ে সঠিক ব্যবস্থা না করে ব্যয় নির্ধারণ করলে অর্থনীতি ব্যাংক ও বৈদেশিক ঋণ নির্ভর হয়ে পড়বে। আগামি বাজেটে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে হবে যাতে চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থা বৃদ্ধি পায়। তাহলে একদিকে যেমন অর্থনীতি সচল হবে অন্যদিকে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে। ফলে সরকার চাহিদা মতো ব্যয় করতে পারবে। রাজস্ব আদায় না বাড়িয়ে বিদেশ থেকে কঠিন শর্তে ঋণ নিলে পরবর্তীতে অর্থনীতি আরও বেশি পঙ্গু হয়ে যাবে। একটি গতিশীল, সুস্থ, চলনশীল অর্থনীতি থেকে রাজস্ব আসে। অচল অর্থনীতি থেকে রাজস্ব আসে না। অর্থনীতিকে সচল করতে হলে বেকরত্ব দূর করতে হবে, মধ্যবিত্ত সমাজকে রক্ষা করতে হবে, খেটে খাওয়া মানুষ ও কৃষকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ব্যবসায়ীদের সঠিকভাবে প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হবে। মধ্যবিত্তরা যদি নি¤œবিত্ত হয়ে যায় তাহলে তাদের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাবে।
যেকোনো অতিমারীর পর সমাজে অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে বৈষম্য সৃষ্টি হয় তা যদি দূর না করা যায় তাহলে সব কিছুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অর্থনীতিও ঝুঁকিতে পড়বে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে মানুষকে কর্মমুখী করতে হবে, ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে, মানুষকে কথা বলার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। তা নাহলে আগামী অর্থ বছরে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। অনেক উন্নত দেশেও এখন নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। সর্বোপরি রাজনীতির ওপর একটি বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। গ্রামে এখন একটি নীরব হাহাকার চলছে কারণ অনেকেই বেকার ও চাকরি হারিয়ে বসে আছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, ছোট ব্যবসা ও বেসরকারি বিনিয়োগ বন্ধ আছে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা অযথা পড়ে আছে। তাই অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে হলে এসব বিষয়কে গতিশীল ও রাজস্ব আদায়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।