পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা দেশে বেড়েছে অবৈধ বিটকয়েনের কেনাবেচা
সুজন কৈরী : বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলেও ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের কেনাবেচা থেমে নেই। বিটকয়েনের মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বিদেশে অর্থ পাচারের জন্য এক শ্রেণির কালো টাকার মালিক বিটকয়েনকে বেছে নিয়েছেন এবং এটি কেনাবেচার মাধ্যমে কালো টাকার মালিকরা তাদের অবৈধ অর্থ সাদা করে নিচ্ছেন।
সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগ এবং র্যাব পৃথক অভিযান চালিয়ে বিটকয়েন ব্যবসায়ী চক্রের দুজনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানতে পেরেছে। বিট কয়েনে কেনাবেচা বেড়ে যাওয়ায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নজরদারি বাড়ায়। এরই অংশ হিসেবে গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে বিট কয়েন কেনাবেচার সময় মাহমুদুর রহমান জুয়েল (২৭) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে অবৈধভাবে বিটকয়েন কেনাবেচা বেড়েছে। তারা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রুপকে শনাক্ত করেছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তার জুয়েলের এক স্বজন ফ্রান্সে থাকেন। তার মাধ্যমে জুয়েল ৭ হাজার ডলার দিয়ে এক বিটকয়েন কিনেছিলেন। সম্প্রতি তিনি বিটকয়েনটি ২১ হাজার ডলারে বিক্রি করেন। যদিও বর্তমানে বিটকয়েনের মূল্য ৫৮ হাজার ডলার পর্যন্ত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুয়েল স্বীকার করেছেন, মালয়েশিয়া থাকার সময় তিনি বিটকয়েন কেনাবেচায় জড়িত হন। ২০১৬ সালে দেশে ফিরে এসে বিটকয়েনের ব্যবসা করছিলেন।
ডিএমপির গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের ডিসি গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, বিটকয়েন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। এটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কেনাবেচা হয় এবং এদেশে নিষিদ্ধ বলে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চক্রের সদস্য জুয়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়। অনলাইনে বিটকয়েনে কেনাবেচার মাধ্যমে দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। এরকম বেশ কয়েকটি গ্রুপকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। গ্রেপ্তারের সময় জুয়েলের কাছ থেকে বিটকয়েনের হিসাব (অ্যাকাউন্ট) এবং লেনদেন সংক্রান্ত দুটি ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে জানিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, অর্থ পাচার ও অবৈধ লেনদেনের জন্য বিট কয়েন কেনাবেচা একটি সহজ মাধ্যম। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত চলছে। জুয়েলকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও কিছু নাম পাওয়া গেছে। তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিট কয়েন ভার্চুয়াল মুদ্রা। এটি ক্রিপটোকারেন্সি নামেও পরিচিত। বিট কয়েন ছাড়া টিআরওএক্স, এক্সআরপি, এডিএ নামে কিছু ক্রিপটোকারেন্সি এদেশে ব্যবহার হচ্ছে। অসাধু চক্রের সদস্যরা তিনটি অ্যাপসের মাধ্যমে লেনদেন করেন। অ্যাপসে গেলেই তারা ক্রেতা-বিক্রেতা সম্পর্কে জানতে পারেন। অন্যান্য মুদ্রা লেনদেনে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক জড়িত থাকলেও বিট কয়েনে এমন কোনও কর্তৃপক্ষ নেই।
এদিকে বিটকয়েন কেনাবেচার নামে প্রতারণাও চলছে। কোনও কোনও সিন্ডিকেট বিটকয়েন কেনাবেচার মাধ্যমে অধিক অর্থ আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। গত ১৩ জানুয়ারি গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সফিপুর দক্ষিণপাড়া থেকে রায়হান নামে এক বিটকয়েন প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব-১। গ্রেপ্তারের পর রায়হানের অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে এক মাসে ৩৫ হাজার ডলার লেনদেনের তথ্য পায় র্যাব। প্রতারণার মাধ্যমে আয় করা অর্থ দিয়ে এক কোটি ৭ লাখ টাকা দিয়ে একটি ওডি ব্র্যান্ডের গাড়িও কিনেছিল।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক বিটকয়েন লেনদেনের ব্যাপারে সতর্কতা জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নামবিহীন বা ছদ্মনামে প্রতিসঙ্গীর সঙ্গে অনলাইনে ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের দ্বারা মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। এছাড়া অনলাইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে লেনদেনকারী গ্রাহকরা ভার্চুয়াল মুদ্রার সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকিসহ বিভিন্ন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন বলে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।