আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে চূড়ান্ত সুপারিশ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
আসিফুজ্জামান পৃথিল : শুক্রবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে জাতিসংঘের জাতিসংঘের সেন্টার ফর ডেভলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) পর্যালোচনা সভা শেষে এই সিদ্ধান্ত জানানোর কথা ছিলো। তবে এখনই পূর্ণ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হবে না। সাধারণত চূড়ান্ত সুপারিশের পর ৩ বছর সময় লাগে পূর্ণ মর্যাদা পেতে। ক্ষেত্রবিশেষে ৫ বছর পর্যন্তও লেগে যেতে পারে।
১৯৭৫ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তকমা পায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে উত্তীর্ণ হতে ৩টি ক্যাটাগরিতে নির্দিষ্ট মান অর্জন করতে হয়। এগুলো হলো মাথাপিছু মোট জাতীয় আয়, মানবসম্পদ সূচক, এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক। ৪টি ক্যাটাগরিতেই প্রয়োজনীয় মান আছে বাংলাদেশের।
২০১৮ সালে সিডিপির মূল্যায়ন অনুযায়ী বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ২৭৪ ডলার। উত্তীর্ণ হতে প্রয়োজন ১ হাজার ২৩০ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে প্রয়োজনীয় স্কোর ৬৬ বা তার বেশি। বাংলাদেশের স্কোর ৭৩.৩। যা উন্নত দেশের কাছাকাছি। এই সূচকের ৫ উপাদান ৫ বছরের নিচে মৃত্যুহার, অপুষ্টিতে থাকা জনসংখ্যা, মাতৃমৃত্যু, উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ও প্রাপ্ত বয়স্কদের শিক্ষার হারে খুবই ভালো করছে বাংলাদেশ। আর অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে ৩২ এর নিচে স্কোর হলেই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে যাওয়া যায়। বাংলাদেশের স্কোর মাত্র ২৫.২। ১৫ জানুয়ারি সিডিপির সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ আরও দুই বছর সময় চেয়েছে। সিডিপি বাংলাদেশের সেই অনুরোধ রেখে সুপারিশ করলে ২০২৬ সালে চূড়ান্ত স্বীকৃতি মিলবে। ওই বছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এই চূড়ান্ত স্বীকৃতি দেবে। এলডিসি থেকে কোন দেশ বের হবে সেই বিষয়ে সুপারিশ করে থাকে জাতিসংঘের সিডিপি। এ জন্য প্রতি তিন বছর পরপর এলডিসিগুলোর ত্রিবার্ষিক মূল্যায়ন করা হয়। এজন্য গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে বৈঠক করছে সিডিপি। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এই তিনটি সূচক দিয়ে একটি দেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে পারবে কি না, সেই যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। যেকোনো দুটি সূচকে যোগ্যতা অর্জন করতে হয় কিংবা মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার দ্বিগুণ করতে হয়। সিডিপির পরপর দুই মূল্যায়নে এসব মান অর্জন করলেই এলডিসি থেকে বের হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়। ২০১৮ সালের সিডিপির মূল্যায়নে তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ নির্দিষ্ট মান অর্জন করেছিল। এবার ২০২১ সালের মূল্যায়নেও তিনটি সূচকেই তিনটি সূচকে মান অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই পর্যন্ত মালদ্বীপসহ মোট পাঁচটি দেশ এলডিসি থেকে বের হয়েছে। ওই পাঁচটি দেশের মধ্যে বতসোয়ানা ও ইকোইটোরিয়াল গিনি শুধু মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ করে এলডিসি থেকে বের হয়েছে। অন্য দুটি সূচকে কখনোই নির্ধারিত মান অর্জন করতে পারেনি। আবার মালদ্বীপ, সামোয়া ও কেইপ ভার্দে, এই তিনটি দেশ অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে মান অর্জন করতে পারেনি। বের হওয়ার পর বাংলাদেশ হবে ইতিহাসের একমাত্র দেশ, যারা ৩ টি সূচকেই মানোন্নয়ন করতে পারে।
ষাটের দশকে স্বল্পোন্নত দেশের ধারণাটি আসে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে উন্নয়নশীল ও উন্নত—এই দুই শ্রেণিতে সব দেশকে ভাগ করে থাকে জাতিসংঘ। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে যে দেশগুলো তুলনামূলক বেশি পিছিয়ে আছে, তাদের নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে জাতিসংঘ। ১৯৭১ সালে প্রথম স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা করা হয়।