আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৪
লাইসেন্স নিয়ে অর্থ লেনদেন ব্যবসা করতে পারবে যেকোনো প্রতিষ্ঠান
সোহেল রহমান : মূল ব্যাংকিং সেবার বাইরে অর্থ লেনদেন পরিশোধ ব্যবসায় আগ্রহী ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ সেবা প্রদানের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ-সংক্রান্ত পৃথক অনুমোদন নিতে হবে। ব্যবসা পরিচলনার ক্ষেত্রে ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১’-এর সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানও অর্থ লেনদেন পরিশোধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান অনুসরণ-পূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিতে হবে এবং ব্যবসা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত পরিমাণে, হারে ও পন্থায় মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণীতব্য ‘পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম্স আইন ২০২১’-এর খসড়ায় এসব বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণীত মূল খসড়া আইনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পর্যালোচনা বৈঠকে ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ‘আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটি’ কর্তৃক প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়েছে এবং সংশোধিত খসড়াটি বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দিয়েছে। বর্তমানে আইনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ-কমিটি-তে রয়েছে। খসড়া আইনে অর্থ লেনদেন পরিশোধ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদ গঠনে কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ কোনো ঋণখেলাপি অর্থ লেনদেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না এবং প্রতিষ্ঠানের কোনো উদ্যোক্তা পরিচালকের শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে না। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।
বর্তমান ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনেক ধরনের লেনদেন হচ্ছে। মূল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে ইন্টারনেট ও এজেন্ট ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক তহবিল স্থানান্তর, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডসহ বিকাশ, নগদ, রকেট, বিভিন্ন ব্যাংকের ই-ওয়ালেট, ইন্টারনেন্ট ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক মুদ্রা, ইলেট্রনিকভাবে তহবিল স্থানান্তর, চেক ইলেট্রনিকভাবে উপস্থাপন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল মুদ্রা, ট্যাংকেটেড চেক, ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট, সরকারি সিকিউরিটিজ সেটেলমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদি। এসব পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ, অর্থ গ্রহণ ও গ্রাহকের অর্থ চাহিদা নিষ্পত্তি হচ্ছে। আর এসব পদ্ধতি ব্যবহার করছে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এজেন্ট ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট। এদের কার্যক্রম তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো এবং গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এ আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
খসড়া আইন অনুযায়ী, বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে কোনো প্রতিষ্ঠান লেনদেন ব্যবসা পরিচালনা করলে সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর বিধিনিষেধ আরোপসহ সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত ও প্রত্যাহার করা হতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স না নিয়ে বা কোনো বিধি লঙ্ঘনের দায়ে লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পর কেউ এ ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করলে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এরপরও একই কার্যক্রম অব্যাহত রাখলে প্রতিদিনের জন্য ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।
এছাড়া নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা, তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অসহযোগিতা করা, কোম্পানির হিসাব, বহি বা নথিপত্র নষ্ট, ধ্বংস, পরিবর্তন, গোপন বা ভুলভাবে উপস্থাপন এবং অসাধু উদ্দেশ্যে পরিশোধের ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেন এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ১ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক দ-ে দ-িত করার বিধান রাখা হয়েছে। খসড়া আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গ্রাহক বা জনস্বার্থবিরোধী কোনো কার্যক্রমে লিপ্ত হলে সেটি অবসায়ন করতে হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে তৃতীয় কোনো পক্ষের আবেদনে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের অবসায়ন হবে না। আর আদালত থেকে অবসায়ন কার্যক্রম জারি করা হলে ওই প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের সঙ্গে কোনো লেনদেন করতে পারবে না। গ্রাহকের দায়-দেনা প্রশাসকের ওপর বর্তাবে। তবে অবসায়নকালে গ্রাহককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়া লেনদেন ব্যবস্থা কার্যক্রম ও ঝুঁকি কমাতে এ সংক্রান্ত কাজের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালা প্রণয়ন করবে। ওই নীতিমালায় গ্রাহকের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা থাকবে। আর এ ব্যবসার মানদ-, পদ্ধতি ও বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভূমিকা এবং নীতিগত সহায়তা করবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে তারল্য সরবরাহ ও প্রতিষ্ঠানের মূলধন সংরক্ষণ করবে।