উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়বে
আসিফুজ্জামান পৃথিল : করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশের অনুরোধে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের গ্রাজুয়েশন দুই বছর পিছিয়ে ২০২৬ সাল নির্ধারণ করেছে জাতিসংঘ। এ সময়ের মধ্যে স্বল্পোন্নত বা এলডিসি দেশের প্রাপ্ত সব সুবিধাই পাবে বাংলাদেশ। তবে ২৬ সালের পর তা আর থাকবে না। এক নতুন মর্যাদায় বাংলাদেশকে মূল্যায়ন করবে পৃথিবী। তবে রপ্তানি বাজারে স্বল্পমেয়াদে বাধা তৈরি হতে পারে।
অর্থনৈতিক সক্ষমতার কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বেশি সুদে অনেক বেশি ঋণ নেওয়ার সক্ষমতা বাড়বে। বেশি ঋণ নিতে পারলে অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নে আরও বেশি খরচ করা সম্ভব হবে।
অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা মোকাবেলায় যথেষ্ট সক্ষমতা থাকায় বিদেশি বিনিয়োগও আকৃষ্ট হবে। এসব কারণে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরের চেয়ে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর একটু সহজ হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হতে চায় ঢাকা। তবে বাংলাদেশ ইতিহাসের একমাত্র দেশ, যারা ৩ সূচকেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে।
এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় শুল্কমুক্ত বাণিজ্যসুবিধা পায়। আঞ্চলিক বা দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতেও এই ধরনের শুল্কসুবিধা পেয়ে থাকে। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৬ সালে এসব সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপির আওতায় এই শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত। এই বাড়তি শুল্কের কারণে রপ্তানি বছরে ৫৩৭ কোটি ডলার বা সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা কমতে পারে।
এলডিসি থেকে বের হলে ওষুধশিল্পের ওপর মেধাস্বত্ব বিধিবিধান আরও কড়াকড়ি হবে। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোকে আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানকে মেধাস্বত্বের জন্য অর্থ দিতে দিতে হয় না। তবে এই সুবিধা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত পাবে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহজ শর্তের ঋণ পাওয়ার সুযোগ সীমিত হতে পারে। এলডিসি হিসেবে যেকোনো দেশ তার দেশে উৎপাদিত পণ্য বা সেবার ওপর নগদ সহায়তা ও ভর্তুকি দিতে পারে। এসব ভর্তুকি ও নগদ সহায়তা দেওয়া বন্ধ করার চাপ আসতে পারে। এমনকি বাংলাদেশ এখন যে রপ্তানি আয় বা রেমিট্যান্স আনায় নগদ সহায়তা দেয়, তা নিয়ে আপত্তি উঠতে পারে। এলডিসি থেকে বের হলে জাতিসংঘে চাঁদার পরিমাণ বেড়ে যাবে। বাংলাদেশকে আগের চেয়ে বেশি খরচ করতে হবে।
স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সরকারি কর্মকর্তারা জাতিসংঘের বিভিন্ন সভায় যোগ দিতে সৌজন্য বিমান টিকিট পান। ২০২৬ সালের পর এ ধরনের ফ্রি টিকিট মিলবে না। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নত দেশগুলো স্বল্পোন্নত দেশের শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের বৃত্তি দেয়। এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে এ ধরনের বৃত্তির সংখ্যা কমে যাবে।