আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ২
সামাজিক সুরক্ষা ভাতা বঞ্চিত ৪৬ শতাংশ : ড. শামসুল আলম
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় এমন অনেকে ভাতা পাচ্ছেন, যাদের পাওয়ার দরকার নাই। তারা ধনী, তবু তারা পেয়ে যাচ্ছেন। আর যাদের পেতে হবে, তাদের অনেকেই বাদ পড়ছে, প্রায় ৪৬ শতাংশ।
রোববার ‘করোনার প্রভাবে এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ: স্বাস্থ্য ও শিক্ষা’ শীর্ষক এক অন-লাইন সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম।
তিনি বলেন, ‘এর মানে সামাজিক সূরক্ষা কর্মসূচিতে বড় ধরনের অপচয় আছে। আমি সেটা অস্বীকার করবো না। কারণ এটা একটা গবেষণার ফলাফল থেকে প্রাপ্ত। আমরা চাই, ২০২৫ সালের মধ্যে সকল দরিদ্র্য সামাজিক সুরক্ষার কোনো না কোনো কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হোক।’
ড. শামসুল আলম বলেন, ‘শ্রেণিগত অসাম্য না থাকলেও বাংলাদেশে আঞ্চলিক বৈষম্য আছে। স্বাস্থ্য সেবায়, দারিদ্র্যে, শিক্ষা ক্ষেত্রে অঞ্চল বৈষম্য আছে। সেজন্য নারায়ণগঞ্জে ৩ শতাংশ দারিদ্র্য, অথচ রংপুরে ৭১ শতাংশ। আঞ্জলিক বৈষম্য কমিয়ে আনতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অনেকগুলো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যেমনÑ পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, অনুন্নত অঞ্চলগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল রাখার জন্য বা সেসব এলাকায় স্কুল-কলেজ গড়ে তোলার জন্য। সেগুলো কতটা বাজেটে প্রতিফলিত হচ্ছে, সেদিকে নজর দিতে হবে। পরিকল্পনার সঙ্গে বাজেটের সমন্বয় না হলে পরিকল্পনা করে ফল পাওয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির উচ্চতর পর্যায়ে গেছে। তবে করোনায় কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। অন্যদিকে এসডিজি বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ তো আছেই। বিশেষ করে এই করোনার কারণে দারিদ্র্য বাড়ার একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। যদিও আমরা খুব সুন্দরভাবে আমরা তা হ্যান্ডেল করেছি। এসডিজি বাস্তবায়ন কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে। তবু আমরা আশা করছি, তৃতীয় বর্ষ থেকে পুরনো প্রবৃদ্ধির পথে ফিরে যাবো এবং এসডিজি বাস্তবায়ন সামলিয়ে উঠতে পারবো। সেভাবেই পরিকল্পনা সাজিয়েছি।’
ড. শামসুল আলম বলেন, ‘শিক্ষা কমিশনে বলা হয়েছিল, সকলের জন্য সর্বজনীন শিক্ষা। আমাদের অনেক বিজয়, সাফল্য, কৃতিত্ব আছে; কিন্তু শিক্ষার ক্ষেত্রে সার্বজনীনতা আমরা এখনও অর্জন করতে পারি নাই। জনগণকে শিক্ষার আওতায় আনতে হবে। প্রাথমিকেই প্রায় ১৮-১৯ ভাগ শিশু ঝড়ে পড়ছে। এটা তো মানবসম্পদের বড় অপচয়। কতো প্রতিভা হয়তো ঝরে যাচ্ছে। আমরা জানতে পারছি না। যদি শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারতাম, তাদের কেউতো বিজ্ঞানী হতে পারতো, কেউ কবি হতে পারতো। শিক্ষা না পেলে তো তারা গাড়ির হেলপার হয়েই থাকবে। এই অপচয় অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শিক্ষা ব্যয় বাড়িয়ে ৪ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলেছি। যেটি বর্তমানে ২ দশমিক ৬ শতাংশে আছে। আসলে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, শিক্ষা ব্যয় ৬ শতাংশে যাওয়া উচিত। তবু এটা এখন যেহেতু ২ দশমিক ৬ আছে, এটাকে ৪ শতাংশে নিতে পারলেও বড় রকমের উল্লম্ফন হবে। আর স্বাস্থ্য খাতে আমরা এখন ব্যয় করছি ১ দশমিক ৬ শতাংশ। সেটি ২ শতাংশে নেবার কথা বলেছি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। সেটি করতে পারলেও বড় রকমের উল্লম্ফন হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ‘অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট’ (এএসডি)-এর নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী বলেন, ‘করোনায় একটা বড় ক্ষতি হলো, অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে। অনেকে কাজে চলে গেছে, অনেকের বাল্য বিয়ে হয়ে গেছে। তাদেরকে কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়? আবার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী অনেক জায়গায় বড় বড় প্রণোদনা দিয়েছেন। বেসরকারিভাবে যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতেন, বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলোর জন্য প্রণোদনার কথা শুনি নাই। তাদেরকে কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়? কারণ তারা তো সমাজকেই সেবা দিচ্ছিলেন। মানুষ উপকৃত হচ্ছিল। কতগুলো বন্ধ হয়েছেÑ তা নিয়ে জরিপ করার প্রয়োজন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এগুলো করা দরকার বাজেটের আগেই।’
জার্মান ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর পৃষ্ঠপোষকতা এবং ‘অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট’ (এএসডি) ও ‘ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ’ (ডিজেএফবি)-এর যৌথ উদ্যোগে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর। মূল প্রবেন্ধর ওপর আরও আলোচনা করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক, রোগতত্ত্ববিদ ও মানিকগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইসরাত শর্মী, উন্নয়ন কর্মী তাহমিনা শিল্পী, প্রতীক যুব সংসদের নির্বাহী প্রধান সোহানুর রহমান।