আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৪
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণকালীন পাঁচ চ্যালেঞ্জ দ্রুত কৌশলপত্র প্রণয়নের তাগিদ ড. দেবপ্রিয়’র
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে গত ছয় বছর যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আগামী পাঁচ বছরও বাংলাদেশের জন্য ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বাংলাদেশ যেমন বেশ কিছু সুবিধা হারাবে, অন্যদিকে বেশ কিছু সম্ভাবনাও তৈরি হবে। পাশাপাশি এ সময় প্রতিকূল বিশ্ব অর্থনীতির মধ্যে বিকাশ লাভ করতে বাংলাদেশকে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হতে পারে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারকে যত দ্রুত সম্ভব একটি উত্তরণকালীন কৌশলপত্র প্রণয়ন করতে হবে।
রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ : এরপর কী’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’ (সিপিডি)-এর বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের ‘কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি’ (ইউএন-সিডিপি) তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জন্য পাঁচটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলে উল্লেখ করেছে। এগুলো হচ্ছেÑ অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও কয়লাভিত্তিক জ্বালানি থেকে সরে এসে দূষণমুক্ত টেকসই জ্বালানির ব্যবহার করা।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকার প্রণীতব্য কৌশলপত্রের বিভিন্ন লক্ষ্য থাকবে। একটা হবে স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ার সুবাদে বাংলাদেশ এখন যেসব সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছে, উত্তরণকালীন কর্মসূচির ভেতরেও সেসব পদক্ষেপ কার্যকর রাখা। এলডিসি থেকে বের হয়ে গেলেও নতুন আন্তর্জাতিক সমর্থন ও সহযোগিতা যাতে পেতে পারি, সেসব বৈশ্বিক উদ্যোগকে কাজে লাগানো। কৌশলপত্র প্রণয়নে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, ১০০ বছর মেয়াদি বদ্বীপ পরিকল্পনা, জলবায়ু অ্যাকশন প্ল্যান এবং জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি এজেন্ডা ইত্যাদিও সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। তিনি বলেন, একইসঙ্গে কৌশলপত্র প্রণয়নে সরকারকে আরও দুটি বিশেষ চ্যালেঞ্জের বিষয় মনে রাখতে হবে। এর একটি হচ্ছেÑ কোভিড-উত্তর পুনরুদ্ধার কর্মসূচি ও রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলা। এছাড়া অন্তর্ভূক্তিমূলক জাতীয় উন্নয়ন, বৈষম্য কমিয়ে আনা, মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার অব্যাহত রাখা, মানবসম্পদ উন্নয়নের ধারাকে বেগবান রাখা, জলবায়ু পরিবর্তন–সম্পর্কিত বিপন্নতা নিয়ন্ত্রণে রাখা, সুশাসন ও রাষ্ট্রজীবনের সব ক্ষেত্রে নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা এসব ক্ষেত্রেও সরকারকে নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা হারানোর কারণে রপ্তানি আয় ৮ থেকে ১০ শতাংশ কমে যেতে পারে। এর পরিমাণ প্রায় ২৫০ কোটি ডলার। এছাড়া স্বল্পসুদে ঋণ প্রাপ্তি ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থায়ন পাওয়া কঠিন হবে। ওষুধশিল্পের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব আইন আরও কড়াকড়ি হবে। কৃষিতে ভর্তুকি দেয়া এবং নতুন শিল্পকে সমর্থন দেয়া সীমিত করতে হবে।
এছাড়া রাজস্ব আদায় ও বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য বাড়াতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিম-লে দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে নিউইয়র্ক, জেনেভা, ব্রাসেলসহ অন্য মিশনগুলোকে যৌথভাবে মনোযোগী হতে হবে। ব্যক্তি খাত ও বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এসব উদ্যোগে সম্পৃক্ত রাখতে হবে।