সম্ভাবনাময় হলেও ধুপের বাণিজ্যিক চাষ নেই দেশে
মতিনুজ্জামান মিটু : আবহমানকাল ধরে দেশের অনেক মানুষ প্রতি সন্ধ্যায় বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ধুপ জ্বালিয়ে ধোয়া দিয়ে থাকেন। এতে ঘরের দুর্গন্ধ দূর ও মশা তাড়াতে সহায়তা হয়। বাড়িতে ও মন্ডপে পুজোর সময় দুবেলা অনেকেই ধূপ জ্বালিয়ে থাকেন। মশাল জ্বালাতেও ব্যবহার হয়ে থাকে ধুপ। বাংলাদেশে ব্যবহৃত ধুপের পুরোটাই এখনো আমাদানিতেই মেটানো হয়। ধুসর ও সাদাটে বর্ণের কাঠ সহজে ঘুন ও কাঠ ছিদ্রকারি পোকায় আক্রান্ত হয়। ধুপ কাঠ সংরক্ষণ করে রাখা যায় না।
সিজনড ধুপ কাঠ দিয়ে ভিনিয়ার প্লাউড সিলিং, ফ্লোরিং, পার্টিশন, প্যাকিং বক্স, চায়ের বক্সসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা যায়। গাছের বাকল কেটে কালো আলকাতরা সদৃশ্য রসালো পদার্থ বা কস বের করা হয়। যা শুকালে ধুপ নামের শক্ত ভঙ্গুর পদার্থে পরিণত হয়।
বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নিউগিনি, ফিজি, সামোয়া, তঙ্গা, সলোমোন দ্বীপপুঞ্জ, নাইজেরিয়া, মাদাগাস্কার ও অস্ট্রেলিয়ায় ধুপ গাছ দেখা যায়। বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের চট্টগ্রামের নার্সারীতে ধুপের চারা বিক্রি হয়।
২০১২ সালে তৈরি বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে ধুপ সংরক্ষিত উদ্ভিদ হিসেবে অবহিত। বাংলাদেশে ধুপ একটি বিরল প্রজাতির গাছ। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট অঞ্চলের চির সবুজ বনের পাহাড়ের ঢালুতে প্রকৃতিকভাবে কদাচিত ধুপ গাছ দেখা যায়। পুরোনো ঢাকার ওয়ারিতে বলদা গার্ডেনে এবং চট্টগ্রামে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে কিছু গাছ সংরক্ষিপ্ত অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া অরণ্যক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন ও পরিবেশ ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৫ সালে ধুপের চারা লাগিয়ে প্রজাতিটিকে সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা ড. রফিকুল হায়দার জানান, ধুপের বাণিজ্যিক চাষাবাদ সম্ভাবনাময়। এই চাষ দেশে কর্মসংস্থানের জন্য অনেক সুযোগ তৈরি করতে পারে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রকাশিত ১০০ কৃষি প্রযুক্তি এটলাসে ধুপের নার্সারি ও বাগান উত্তোলন কৌশল সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ধুপের বীজ স্বল্প আয়ু সম্পন্ন এবং ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে অংকুরোদগম ক্ষমতা হারায়। বনায়নের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এ বৃক্ষপ্রজাতির পুনরুজ্জীবনের জন্য নার্সারি ও বনায়ন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে।
এই কৌশলের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্টের মধ্যে রয়েছে; সহজ ও কম খরচে বেশি চারা উৎপাদন করা যায়। মাঠে চারা বেঁচে থাকার হার শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে পরিপক্ক ফল সংগ্রহ করে দুই এক দিনের মধ্যে ফলে মাংসল অংশ ছিলে বীজ বের করা হয়। এরপর পাকা মেঝেতে ২ দিন রোদে ভালোভাবে শুকালে বীজের শক্ত ত্বক হালকা ফেটে যায়। তখন এ বীজ তৈরি করা বেডে বপন করতে হয়। অঙ্কুরোদগম শুরু হয় বীজ বপনের ২২ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে এবং শেষ হয় ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে। অঙ্কুরোদগম হার শতকরা ৮০ ভাগ। নার্সারিতে নিয়মিত পানি ও সেডসহ নিয়মিত পরিচর্যা করলে ৮ থেকে ৯ মাস পর চারার উচ্চতা ৬০ সেন্টিমিটার থেকে ৭০ সেন্টিমিটার হয়। এ চারা তখন মাঠে লাগানোর উপযোগী হয়।
চারা ২ মিটার বাই ২ মিটার দূরত্বে আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানে লাগানো ভালো। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের জন্য এই প্রযুক্তি উপযোগী। কৃষক ও ব্যবহারকারীরা এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই বাগানোর জন্য চারা উত্তোলন করতে সক্ষম হবেন। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও