উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ‘বন্দরের সক্ষমতা-দক্ষতা বাড়াতে হবে’
ভূঁইয়া আশিক রহমান : বিশ^ব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ উল্লেখযোগ্য পজেটিভ ডেভেলপমেন্ট। তবে এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে আগের সুবিধাগুলো রাখা যাবে কিনা, সুবিধাগুলো উঠিয়ে দিলে কী হবেÑ যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে তা মোকাবেলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ভর্তুকি ছাড়া যেন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ পণ্যগুলো বিশ^বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারে, সেজন্য বন্দরে সক্ষমতা-দক্ষতা বাড়াতে হবে। বন্দরে পণ্য নিয়ে যদি তিনদিন বসে থাকতে হয় জাহাজে ওঠাতে, তাহলে রপ্তানিকারকদের খরচ বাড়ে। আমরা যদি বন্দরের দক্ষতা বাড়াতে পারি, তাহলে ব্যয় কমানো যাবে। এতে ভর্তুকি উঠে গেলেও রপ্তানিকারকদের ব্যবসায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ভর্তুকির ভিত্তিতে কোনো শিল্প চিরদিন চলতে পারে না। ভর্তুকির নির্ভরশীলতা কমানো শিল্পের জন্য ভালো। কারণ এখানে যারা দক্ষ উদ্যোক্তা, ব্যবসাটা বোঝেন ভালোভাবে, তারাই টিকে থাকবেন। আমাদের অনেক ব্যবসা হয় শুধু ভর্তুকিকে কেন্দ্র করে। আমরা যদি আমাদের বন্দরের সক্ষমতা, দক্ষতা বাড়ানো বাড়াতে পারি, আমলতান্ত্রিক জটিলতাগুলো যদি দূর করা যায়, তাহলে ব্যবসায়ীদের আর ভর্তুকির ওপর নির্ভর থাকতে হবে না।
তিনি বলেন, অ-কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানির ওপর ভর্তুকির সাধারণত ডব্লিউটিও অ্যালাউ করে না। কিন্তু এলডিসিভুক্ত দেশগুলোকে সেটা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। নিয়ম হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে আপনি যে পণ্য রপ্তানি করছেন, এটা যদি একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রোডাক্ট হয়, সেটা যদি টোটাল রপ্তানির ৩ বা ৫ শতাংশ যদি রপ্তানি হয়ে থাকে, তাহলে বোঝা যায় এটা গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। এটাতে ভর্তুকি দেওয়া অ্যালাউড নয়। কারণ যে দেশে বিক্রি করছেন, সেদেশের প্রতিযোগিরা ভর্তকি পায় না। এসব সুবিধা উন্নয়নশীল দেশ হলে চলে যাবে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ বাংলাদেশের ব্রান্ডিংয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর যুক্তরাজ্যের একটা পলিসি আছেÑ গ্রাজুয়েশনের পর তিন বছর সময় দেয় তারা উত্তরণ যাতে মসৃণ হয়।
তার মানে আমরা ২০২৯ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বর্তমানে যে ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রি সুবিধা পাই তা ২০২৯ সাল পর্যন্ত থাকবে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনা করে নিতে হবে। গ্রাজুয়েশনের পরে তারা সুবিধাগুলো কতোদিন রাখবে। চীন ২০২০ সালের জুলাই থেকে আমাদের পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। এটা দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে।
ভারত থেকেও আমরা অনেক বাণিজ্যিক সুবিধা পাই এলডিসিভুক্ত দেশ হওয়ায়। এলডিসিভুক্ত দেশ হওয়ার কারণে সাফটার অধীনেও কিছু বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়। এ সবই টেবিলে চলে আসছে। বলা হবে, তোমরা তো এখন গ্রাজুয়েট করে ফেলছো, এসব সুবিধা থাকবে কিনা। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রভাব কী হবে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর, সেটা বিশ^ অর্থনীতির ওপর নির্ভর করবে।
এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলেই যে আমাদের ক্ষতি হবে তা ধরে নেওয়া যায় না। তবে এটা ঠিক যে প্রতিযোগিতার মাঠটা আরও অনেক কঠিন হবে। কারণ এখন একেবারে শূন্য শুল্কে পণ্য বিক্রি করা যায়। সেটা হয়তো থাকবে না একটা সময়ের পর।