আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ২
নিউজউইকে লেখা কলামে সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশ শুরুর পর সাশ্রয় হয়েছে ৮ বিলিয়ন ডলার
আসিফুজ্জামান পৃথিল : ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১৩ লাখের বেশি টেক পেশাদার তৈরি হয়েছে। তারা দেশে বসেই কাজ করছেন। এখন দেশে তথ্যপ্রযুক্তিখাতে ১০ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা রয়েছেন। সব মিলিয়ে এখন বিভিন্ন দেশ থেকে এ খাতে বছরে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল যাত্রা শুরুর পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ ১ বিলিয়ন ঘণ্টা, ৮ বিলিয়ন ডলার রক্ষার পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন অফিসে ১ বিলিয়ন বার যাতায়াতের হাত থেকেও মুক্তি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক নিউজউইকে লেখা এক কলামে এই কথা জানান প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা।
এক দশকেরও আগে অঙ্গীকার করা হয়েছিল ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পা রাখার সমান্তরালে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তিতেও অগ্রসর এক রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তখন অল্প মানুষ বিশ্বাস করেছিল আমরা এ স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো। এ প্রকল্পের সবচেয়ে বড় সমর্থক ও সহযোগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এলেন, সে সময় দেশের মাত্র দুই কোটি মানুষের হাতে মোবাইল ছিল। তবে এখন ১২ কোটিরও বেশি মানুষ তা ব্যবহার করে। প্রত্যন্ত গ্রামেও এখন লাখ লাখ মানুষের উচ্চ গতির সংযোগ সুবিধা আছে। এসব সুবিধার ফলে অগণিত মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। এ পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল ধীরগতির কাগজভিত্তিক সরকারি সেবাকে দ্রুত গতির এবং সহজে ব্যবহার করা যায় এমন ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন ভিত্তিক প্রোগ্রামে রূপান্তর করা। ই-সিগনেচার ও ইলেকট্রনিক নথির ব্যবহার জনপ্রিয় করতেও ব্যাপক উৎসাহ দেওয়া হয়। এসব কাজ সত্যি সুফল দিয়েছে।
নাটকীয় গতিতে দেশের ইন্টানেট যুগে প্রবেশের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে থাকা বাংলাদেশের অন্যতম বড় অর্জন। তিনি জানান, এখন এমনকি ডিজিটাল দক্ষতাও বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছি আমরা। বাংলাদেশের প্রশিক্ষকরা এখন মালদ্বীপ, ভুটান এবং শ্রীলংকার মতো এশীয় প্রতিবেশিকে ডিজিটাল রাষ্ট্রে রূপান্তরের ক্ষেত্রে সহোগিতা করছেন। এক দশক আগেও কেউ ভাবতে পারেননি, এটা সম্ভব।
সাড়ে ৮ হাজার ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে সরকার। এর মাধ্যমে দেশের নাগরিকদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে অনলাইন সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে জন্ম-নিবন্ধন, চাকরি সন্ধান, অনলাইনে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। অনেক জাতীয় কর্মসূচি এখন অনলাইনের মাধ্যমে বাস্তায়িত হয়। এমনকি গত বছর করোনা মহামারির মধ্যে সরকারি সেবা বলতে গেলে নির্বিঘœ ছিল। আদালত নতুন জুডিসিয়ারি পোর্টালের মাধ্যমে কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। কৃষকরা পেয়েছেন জরুরি আবহাওয়া ও কৃষি বিষয়ক তথ্য সেবা। এটা সম্ভব হয়েছে কৃষি পোর্টাল থাকার কারণে। মোবাইলের মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের করোনা বিষয়ক তথ্য সম্পর্কে সচেতন রাখা সম্ভব হয়েছে। করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছে অনেক মূল্যবান প্রাণ।
বাংলাদেশের হাতে এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সরকারি পোর্টাল। এ পোর্টাল এমন একটি ইন্টারনেট লিংক, সরকারের প্রায় সব সেবাখাত এর আওতায় এসেছে। অনলাইনে এখন অনেক প্রোগামই সংযুক্ত রয়েছে। ফলে ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে শুরু করে পার্সপোর্ট করাÑ সবই অনলাইনে সম্ভব হচ্ছে। সরকারের এখন টার্গেট স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ৮৫ শতাংশ সরকারি সেবা নাগরিকের আঙ্গুলের ডগায় নিয়ে আসা। পাশাপাশি ১০ শতাংশ সরকারি সেবা থাকবে নাগরিকদের দরজার একেবারে চৌকাঠে। আর অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সেবা পেতে নাগরিকদের একটু কষ্ট করে সরকারি অফিসে যেতে হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের সফলতার পেছনে অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে মোবাইল ফোনের। দেশের এখন টোল-ফ্রি জাতীয় জরুরি হেল্পলাইন, ৯৯৯ চালু রয়েছে। সাধারণ মানুষ দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে দুর্ঘটনা, অপরাধ, সাইবার অপরাধ, নারীর প্রতি সহিংসতা, অগ্নিকা-, এবং জরুরি স্বাস্থ্য সহায়তাসহ বিভিন্ন প্রয়োজন জানাতে এ নম্বরটি ব্যবহার করে। দেশের এই ন্যাশনাল হেল্পডেস্ক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রতি মিনিটে অন্তত ৬০টি কল পায়। ডিজিটাল যুগের দক্ষ জনবল তৈরিতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও হাতে নেওয়া হয়েছে। দেশের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা এ লক্ষ্যে ঢেলে সাজানো হয়েছে। এখন দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে ৫ লাখ কর্মী স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে। ডিজিটাল সেন্টারগুলো কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। এসব কেন্দ্রের প্রতিটিতে অন্তত তিনটি পদ নারীদের জন্য রাখা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার আগে দেশের তরুণ প্রজন্ম পারিবারিক কৃষিকর্মের বাইরে কাজ করবে ভাবতে পারতো না।