বাংলাদেশের প্রত্যাশিত এলডিসি উত্তরণের জন্য আমরা গর্ব করি
এস জয়শঙ্কর, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রায় দেড় বছর পর বাংলাদেশ সফরে এসে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পিত সফরের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছি। এই সফর খুবই স্মরণীয় হবে, কারণ এটি করোনাভাইরাস মহামারীর পরে ভারতের বাইরে তার প্রথম এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে দ্বিতীয় সফর। আমরা জানি যে, এটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি বছর, কারণ উভয় দেশ মুজিববর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পালন করছে। উল্লিখিত তিনটি বার্ষিকীর প্রতি আমরা যে গুরুত্ব আরোপ করেছি এবং সেইসাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের প্রতি আমাদের যে অপরিসীম সম্মান তা এতে প্রতিফলিত হয়।
আমাদের সম্পর্ক গৎবাঁধা অংশীদারিত্বের ঊর্ধ্বে এবং আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের বন্ধন শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং প্রগতিশীল দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কেন্দ্রবিন্দু। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে উভয়পক্ষই এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে, বিশেষত ২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে।
বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের তাৎপর্য আমাদের ‘প্রতিবেশী প্রথমে’ এবং ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির জন্য ক্রমবর্ধমান প্রাসঙ্গিকতার মধ্যে নিহিত রয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে কেবল দক্ষিণ এশিয়াতেই নয়, বিস্তৃত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেও একটি মূল প্রতিবেশী এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করি। আমাদের সম্পর্কের প্রতিটি অর্জন সমগ্র অঞ্চলকে প্রভাবিত করে। সবাই জানেন যে, আমরা অন্যদের কাছে এই সম্পর্ককে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে উদ্ধৃত করি।
এ কারণেই আমরা নিরাপত্তা, বাণিজ্য, পরিবহণ ও সংযোগ, সংস্কৃতি, মানুষে-মানুষে সম্পর্ক থেকে শুরু করে জ্বালানি ও আমাদের অভিন্ন সম্পদ এবং প্রতিরক্ষা সম্পর্কের যৌথ বিকাশ সহ সকল ক্ষেত্রে আমাদের অংশীদারিত্বকে সম্প্রসারিত করার জন্য কাজ করছি।
আমাদের স্বাচ্ছন্দ্যের মাত্রা এখন এত বেশি যে, আমরা দেখিয়েছি যে এমন কোনও সমস্যা নেই যা আমরা আলোচনা করতে পারি না বা বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি না। এটি সন্তুষ্টির বিষয় যে, কোভিড মহামারী সত্ত্বেও, আমাদের মিথস্ক্রিয়া এবং পরামর্শ অব্যাহত ছিল। আমরা ডিসেম্বরে ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন করেছি, সেপ্টেম্বর মাসে যৌথ পরামর্শক কমিশন, পররাষ্ট্র, জ্বালানি ও স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক, পুলিশ প্রধানদের বৈঠক, বিএসএফ-বিজিবি আলোচনা এবং প্রতিরক্ষা সফর করেছি। আমাদের বাণিজ্য, পানি সম্পদ এবং নৌ পরিবহণ সচিব পর্যায়ের বৈঠক শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হবে। এসব বৈঠক উভয় পক্ষের প্রতিশ্রুতিকেই তুলে ধরে।
এমনকি এ মহামারী আমাদের বন্ধুত্বকে আরও দৃঢ় করার সুযোগ দিয়েছে। বাংলাদেশ ভারতে উৎপাদিত কোভিড ভ্যাকসিনের সবচেয়ে বড় গ্রহীতা। এছাড়াও বন্ধুদের মধ্যে আমাদের ভ্যাকসিনের সবচেয়ে বড় উপহারটিও (২ মিলিয়ন) এদেশের জন্য ছিল।
আমাদের সাম্প্রতিক কার্যক্রমগুলি সাধারণ পরামর্শ এবং প্রস্তাবের ঊর্ধ্বে, তা যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন। আমরা মাঠ পর্যায়ে বাস্তব অগ্রগতি অর্জন করেছি। সাম্প্রতিক কয়েকটি উদাহরণ হলো- চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আগরতলায় পরীক্ষামূলকভাবে পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনা, ত্রিপুরাকে আপনাদের জাতীয় নৌপথে সংযুক্ত করার জন্য অভ্যন্তরীণ নৌপথে দু’টি নতুন প্রোটোকল রুট যুক্ত করা, ১০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ হস্তান্তর, কন্টেইনার ও পার্সেল ট্রেন চলাচল শুরু করা এবং জ্বালানি খাতে একটি যৌথ উদ্যোগ গঠন।
আপনাদের নিকটতম প্রতিবেশী এবং বন্ধু হিসেবে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত উত্তরণের জন্য আমরা প্রশংসা ও গর্ব প্রকাশ করি। আমরা আপনাদের অভাবনীয় আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
পরিশেষে, আপনাদের এ গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিকীগুলো উপলক্ষে আমি বাংলাদেশের সমস্ত বন্ধুকে শুভেচ্ছা জানাতে চাই। আপনাদের সকল স্বপ্ন সত্যি হোক এবং আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, ভারত সর্বদা নির্ভরযোগ্য বন্ধু হিসেবে আপনাদের পাশে থাকবে। এ বছরের ২৬ জানুয়ারি আমাদের গণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে আপনাদের অংশগ্রহণ আমাদের অভিন্ন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করে। এটি আমাদের গভীর সংহতিরও একটি অভিব্যক্তি যা আমাদের সম্পর্ককে সর্বদা দিক নির্দেশনা দেবে।