আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ২
চাল তেলের পর মুরগির দামে অস্বস্তি
মাসুদ মিয়া : রাজধানীর বাজারগুলোতে চাল তেলের পর হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে উঠেছে মুরগির দাম। সোনালী বা কক মুরগির দাম প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায় উঠেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা। কক মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। এ নিয়ে টানা দুই সপ্তাহ দাম বাড়ার মাধ্যমে মুরগি এখন অনেকটাই নিম্নআয়ের মানুষের নাগালের বাইরে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির থেকেও দ্রুত গতিতে ছুটছে সোনালী বা কক মুরগির দাম। গত সপ্তাহে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সোনালী মুরগির দাম বেড়ে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে এই মুরগির দাম ছিল ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। মুরগির এমন দাম বাড়ার বিষয়ে লক্ষিবাজারের বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, গরুর মাংস আমাদের কপাল থেকে অনেক আগেই উঠে গেছে। এখন যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে মুরগিটাও কপাল থেকে উঠে যাবে। ছেলেমেয়েদের আবদার পূরণ করতে সপ্তাহে একদিন মাংস খাওয়ার চেষ্টা করি। এ ক্ষেত্রে আমাদের ভরসা ব্রয়লার মুরগি। ব্রয়লার মুরগির দাম কম থাকলে আমরা শান্তি পাই। আর দাম বাড়লে আমাদের কষ্ট বেড়ে যায়।
মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে সুত্রপুর ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, আমাদের কিছু করার নেই। বাড়তি দামে মুরগি কিনতে হচ্ছে, তাই বাড়তি দামে বিক্রি করছি। পাইকারি বাজারে এখন মুরগি কম আসছে। শুনছি খামারে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন কম হচ্ছে।
চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে প্রতি কেজি আটাশ চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়, পায়জাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়, মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়, নাজিরশাইল ৬০ টাকায় থেকে ৬৫ টাকা, পোলাওয়ের চাল ৯০ টাকায় থেকে ১০০ বিক্রি হচ্ছে। খোলা ভোজ্যতেল লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। দুই লিটার বোতল জাত তেল বিক্রয় হচ্ছে ২৭০ টাকা। ৫ লিটার বিক্রয় হচ্ছে ৬৪০ টাকা। লক্ষীবাজারের খুচরা তেল বিক্রেতা ইয়াসিন বলেন, তেলের দাম কমছে না আমরা বাড়তি দামে কিনছি সে জন্য বাড়তি দামে বিক্রয় করছি।
মুরগির দামে অস্বস্তি দেখা দিলেও বাজারে আগের মতোই ভরপুর রয়েছে শীতের সবজি। ফলে কিছুটা হলেও স্বস্তি বিরাজ করছে। তবে বাজারে নতুন আসা ঢেঁড়স, পটল ও করোলার দাম বেশ চড়া। বাজার ও মানভেদে এই তিনটি সবজির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
অপরদিকে আগের মতো পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। শশার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা। কাচা মরিচ বিক্রয় হচ্ছে কেজি ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা। আগের সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ২০ টাকা কমেছে। আগের সপ্তাহ এক কেজি কাচা মরিচ বিক্রয় হয়েছে ৮০ টাকা।
এছাড়া মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ টাকা, বেগুনের কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, গাঁজরের কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই এ সবজিগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ফুলকপি, বাঁধাকপির ও লাউয়ের দামও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা প্রতিটি।
সবজির মতো সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম। খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮ টাকা। এক ডজন ডিম পাওয়া যাচ্ছে ৯০ টাকায়। সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ান-বাজারের ব্যবসায়ী আফসার আলী বলেন, কম দামে সবজি খাওয়ার দিন আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। পাকা টমেটোর সরবরাহ কিছুটা কমলেও দেখবেন সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে টমেটো কোল্ডস্টোরেজে যাওয়া শুরু হয়ে গেছে। আমাদের ধারণা এ মাস শেষ হওয়ার আগেই সবজির দাম বেড়ে যাবে।
বাজারে প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়, বকরির মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়, গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকায়। প্রতি কেজি শিং মাছ (আকার ভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকার ভেদে) ১৮০ থেকে ৩২০ টাকায়, মাগুর মাছ ৫০০ টাকায়, মৃগেল ১১০ থেকে ১৫০ টাকায়, পাঙ্গাস ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, ইলিশ প্রতি কেজি (আকার ভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়, কাতল ১৭০ থেকে ২৮০ টাকায়, ফোলি মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, পোয়া মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়, পাবদা মাছ ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায়, টেংরা ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়, টাটকিনি মাছ ১০০ টাকায়, তেলাপিয়া ১৫০ টাকায়, সিলভার কার্প ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়, দেশি কৈ মাছ ৭০০ টাকায়, কাঁচকি ও মলা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, গুড়া বেলে ১২০ টাকায়, রূপচাঁদা মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়, আইর মাছ ৫০০ টাকায়, রিঠা মাছ ২২০ টাকায় ও কোরাল ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।