
মুজিব বর্ষে সেরা করদাতা সম্মাননা আমার কি পরিমাণ সম্পদ কল্পনাও করতে পারবেন না : কাউছ মিয়া

মো. আখতারুজ্জামান : জর্দা ব্যবসায়ী কাউছ মিয়া বলেন, আমি সাত জমিদারের নাতি। আমার কাছে অনেকের সম্পদ রয়েছে। আমি বলবো যার যার সম্পদ তার তার দেখা উচিৎ। যার যার সম্পদ তারা নিয়ে যাও। আমার কি পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তার সবগুলো আপনাদের জানা নেই। এমন কি আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না।
শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে কাউছ মিয়াকে সম্মাননা জানায় এনবিআর। মুজিব বর্ষে সেরা করদাতা হিসেবে এই সম্মাননা দেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মো. কাউছ মিয়ার হাতে সম্মাননা স্মারক, ক্রেস্ট ও মানপত্র তুলে দেন এনবিআর-এর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এ সময় কাউস মিয়ার ছেলে মানিক মিয়া এবং এনবিআরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কাউছ মিয়া বলেন, আমার ৯০ বছর বয়স হয়েছে। এখনও আমি রাত ২-২.৩০টার আগে ঘুমাতে পারি না। রাত জেগে অফিসের কাজ করতে হয়। আমার অনেকে ব্যবসা রয়েছে। আবার অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা ৫০০ থেকে ৬০০ একর জমি রয়েছে। ছেলেদের নামে জমি রয়েছে। ঢাকা শহরেই আমার বহু জমি রয়েছে। আমি এসব ব্যবসা করেই করেছি। ইনকাম ট্যাক্স ফাইলে এসব সম্পত্তির তথ্য আছে। তবে আমাদের বংশের যেসব সম্পত্তি ছিলো ইনকাম ট্যাক্স ফাইলে এসবের তথ্য দেয়া নেই।
কাউছ মিয়া বলেন, ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের ঋণ আমার বংশের লোকেরা নেয়নি এমনকি আমিও নেইনি। আমার বংশের কেউ রাজনীতি করেনি, আমিও করি না। আমার ছেলেদের রাজনীতি করতে দেই না। আমরা কেউ সরকারি বা বেসকারি চাকরি করেনি। আমিও করিনি এবং ছেলেদেরও করতে দেইনি। তারা ব্যবসা করবে, অনেক ব্যবসা ছে। আমার বাবা বলতেন, রাজনীতি করবে না। নিজে খাটবে, গরিব দুঃখিদের দিবে। আর এটাই তোমাদের সম্পদ। আমাদেও পূর্বপুরুষেরা পায়ে হেঁটে হজ্জ করতে গিয়েছিলেন। আমি মাত্র ৬ ঘণ্টায় ১৯৮৭ সালে হজ্জ করতে গিয়েছিলাম। তিনি বলেন, আমার পরিচিত অনেকেই বলে, ৬০ বছর পরে কাজ নেই। তুমি তো ৯০ বছর বয়সেও খেলে যাচ্ছÑ এটা তো হয় না। তুমি কথা বলবে না। তুমি কাজ করবে না। তুমি পরিশ্রম করবে না। আমি তো কোনোটাই মানি না। এখনও আমাকে ব্যবসার কাজে এখানে সেখানে যেতে হয়। কথা বলতে হয়। লেখালেখি করতে হয়। তবে এখন আর বেশি কথা বলতে পারি না। কারণ একটু কথা বললেই গলা বসে যায়।
তিনি আরও বলেন, এনবিআর আজকে যে আয়োজন করে এই সম্মাননা জানিয়েছে এতে আমি অনেক আনন্দিত। আমরা ৭০ বছরের ব্যবসায় জীবনে এতো আনন্দ কখনও পাইনি। এ জন্য অনেক ধন্যবাদ দেন এনবিআরকে।
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাবার স্মৃতি আমাকে মনে করিয়ে দিলেন। আজ আমি বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করছি। সেইসঙ্গে তারা রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। বঙ্গলবন্ধু আমাকে ১৯৭২ সালে করদাতার পুরস্কার দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, কাউছ মিয়া গত ৬১ বছর ধরে কর দিয়ে আসছেন। ১৯৫৮ সাল থেকে কর দেন তিনি। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এক নম্বর করদাতা হয়েছিলেন কাউছ মিয়া। হাকিমপুরী জর্দা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. কাউছ মিয়া তার ব্যবসা শুরু করেছিলেন মাত্র আড়াই হাজার টাকা নিয়ে, পঞ্চাশের দশকে। এখন তার বিভিন্ন ব্যবসা আর জায়গাজমি মিলিয়ে মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। ১৯৫০ সালে চাঁদপুরে স্টেশনারি ব্যবসার শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে ব্যবসা বাড়লে তিনি নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন। শুরু করেন তামাকের ব্যবসা। বর্তমানে তিনি ৪০-৪৫ ধরনের ব্যবসায় জড়িত আছেন।
