আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৪
চার মাসের ব্যবধানে প্রতি টন রডে দাম বেড়েছে ৬ হাজার টাকা
মো. আখতারুজ্জামান : আবাসন খাতের ভরা মৌসুমে লাফিয়ে বাড়ছে রড ও সিমেন্টের দাম। দেশের রডের বাজারে সব থেকে বেশি দাম বেড়েছিলো ২০০৭ সালে। সেই সময় ভালো মানের এক টন রডের দাম ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠে। এর পর বেশ কয়েক বছর রডের দাম ঠিক থাকলেও সম্প্রতি তা বাড়তে থাকে। বর্তমানে ভালো মানের এক টন রডের ৭২ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে সিমেন্টের দাম মান ভেদে প্রতি বস্তায় বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ায় রড সিমেন্টের দাম বেড়েছে দাবি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।
দাম বাড়ায় বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছে খুচরা ব্যবসায়ীর। আবাসন খাতে বড় প্রভাব পড়ার আশঙ্কা। অন্যদিকে পণ্যের দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে বাড়তে পারে সিমেন্ট ও রড নির্ভর সরকারি প্রকল্পগুলোর ব্যয়। রড উৎপাদনকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে রড়ের কাঁচা পণ্যের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
তাই দেশের বাজারে রডের দাম বেড়েছে। রড সিমেন্টের দাম গত বছরের নভেম্বর থেকে বারতে শুরু করে। প্রতি বস্তা সিমেন্টে মান ভেদে দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। অন্যদিকে ভালো মানের প্রতি টন রডে দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা করে। এমন এক সময়ে সিমেন্ট ও রডের দাম বাড়লো যখন আবাসন খাতের জন্য ভরা মৌসুম। এই সময়ে দাম বাড়ায় আবাসন খাত থমকে দাঁড়াবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজানীর মালিবাগের রড ও সিমেন্টের খুচরা ব্যবসায়ী জামাল হোসেন জানান, এখন আমাদের ভরা মৌসুম। এই সময়ে দাম বাড়লে আমাদের বিক্রি কমে যায়। দাম বড়লে ভবন নির্মাণে গতি কমে। অনেকে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। সিমেন্ট উৎপাদনকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ব বাজারে সিমেন্টের কাঁচামাল বেড়েছে। ক্লিংকার, জিপসাম লাইমস্টোন, সø্যাগ ও ফ্লাই অ্যাশ এসবই হচ্ছে সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল। আর এগুলো পুরোটাই আমদানি নির্ভর। মূলত সিমেন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত ক্লিংকারের দাম আগের তুলনায় অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে সিমেন্টের দামের ওপর। ক্লিংকারের দাম কয়েক দফায় গত এক মাসে ৯ ডলার বা ৭৬৫ টাকা বেড়েছে প্রতি টনে। এতে বস্তাপ্রতি ক্লিংকারের খরচ বেড়েছে ৩৮ টাকার ওপরে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে ক্লিংকার প্রস্তুতে ব্যবহৃত জ্বালানি কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্লিংকারের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে চীন হঠাৎ করে কয়লার আমদানি বাড়ানোর ফলে দাম অব্যাহতভাবে বাড়ছে। এফওবিতে বা উৎপাদন পর্যায়ে যেখানে প্রতি টন কয়লার মূল্য ছিল ৪০ থেকে ৪২ ডলার, তা এখন দাঁড়িয়েছে ৮২ ডলারে। এসব কারণেই আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের অন্যতম মূল কাঁচামাল ক্লিংকারের দাম বেড়েই চলেছে। ফলে দেশের সিমেন্ট খাতেও পড়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন জানান, আবাসন ব্যবসাটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে রড সিমেন্টের উপর। এই দুই উপাদানের দাম বাড়লে আবাসন খাতে তার কঠিন প্রভাব পড়ে। আমরা করোনার প্রভাব এখনও ঠিকভাবে কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এর উপর রড সিমেন্টের দাম বৃদ্ধি। বর্তমানে এক টন রডের দাম ৭২ হাজার টাকা। অন্যদিকে প্রতিবস্তা সিমেন্টে দাম বাড়ানো হয়েছে ৫০ টাকা।
তিনি জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উচিৎ হবে রড ও সিমেন্ট খাতের স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে বসা। তাদের কাছ থেকে দাম বাড়ার কারণটা জানা। প্রয়োজনের তাদেরকে সহযোগিতা করা।