‘গ্রামীণ অর্থনীতির কারণে সামগ্রিক অর্থনীতি গতিশীল’
ভূঁইয়া আশিক রহমান : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির যে স্থিতিশীলতা এখন এবং অন্য অনেক দেশের চেয়ে ভালো, তার কারণ আমাদের কৃষি ভালো করছে। কৃষি আমাদের খাদ্য, কর্মসংস্থান ও বাজার দিচ্ছে। কৃষি শুধু এখন ধান-চাল নয়, কৃষি এখন নানা মাত্রিক। মাছ চাষকে আমরা এখন কৃষি বলি। গরুর খামার, ফুল ও সবজির চাষও কৃষির মধ্যে পড়ে। কৃষি আমাদের জন্য অনেক বড় খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তবে কৃষির পণ্যের দাম অনেক ওঠানামা করে। যখন কৃষিপণ্যের সরবরাহ বেশি হয়, তখন দাম কমে যায়; সরবরাহ কমে গেলে দাম বেড়ে যায়। এটা কৃষির একটা ধর্ম। এই জায়গায় সারাক্ষণ মনিটর করতে হবে যেন কৃষিপণ্য একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখা যায়।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, চালের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাচ্ছে। কারণ গুদামে কী পরিমাণ চাল আছে, চালের আমদানি কখন দরকারÑ এসব বিষয় খুব নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা দরকার। একইসঙ্গে পলিসিও পরিবর্তন করা প্রয়োজন। ইনসেনটিভ দেওয়াও দরকার। অনেক সময় খাদ্যমন্ত্রলায়ের সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হয় বলে কৃষি পণ্যের দামের স্থিতিশীলতাটা পাই না, কখনো কখনো দাম বেড়ে যায়। কৃষকেরাও বুঝতে পারেন না এ বছর দাম ঠিক থাকবে কিনা, সামনে বছর কতো থাকবে। এ নিয়ে কৃষকের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তা থাকে। আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন একটা জাতি। ১৯৭২ সালে প্রায় ১ কোটি টন খাবার উৎপাদন করতাম আমরা, এখন শাক-সবজি-মাছসহ ৬ কোটি টনের মতো খাদ্য উৎপাদন করছি। ৬ গুণের মতো খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে।
ড. আতিউর রহমান বলেন, গ্রামীণ আয়ের ৬০ শতাংশই নরমাল কৃষির বাইরে থেকে আসে। গ্রামে অ-কৃষি খাত অনেক প্রসারিত হয়েছে। ছোটখাটো ব্যবসা, পরিবহন, কফিশপ, বিউটি পার্লারসহ শহরের যে সেবাগুলো এখন গ্রামেও পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে গ্রামে অ-কৃষি আয় বেড়ে গেছে। এটা ভালো একদিক থেকে। কারণ গ্রামে অ-কৃষি আয় বাড়লে আমাদের শিল্প পণ্যের চাহিদাও বেড়ে যায়। গ্রাম ও শহরের মধ্যে সংযোগ অনেক বেড়েছে। গ্রাম ও বিদেশের মধ্যে সংযোগ বেড়েছে। আমাদের ১ কোটির মতো মানুষ বিদেশে কাজ করছে। তারা গ্রামে আসে, খরচ করে, গ্রামের অবকাঠামো ও বাড়ি তৈরি করে। নানাভাবে তারা গ্রামীণ অর্থনীতির ওপর প্রভাব তৈরি করে।
তিনি বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি ও শহরের অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক অনেক বেড়ে গেছে। অনেক নিবির হয়েছে। গ্রাম থেকে ছেলেমেয়েরা শহরে এসে কাজ করছে। বিদেশেও যাচ্ছে। গ্রাম ও শহরের মধ্যে টাকার লেনদেনও বেড়ে গেছে। মোবাইল ব্যাংকে টাকা যাচ্ছে। ব্যাংকের ব্রাঞ্চ বাড়ছে। গতিশীল গ্রামীণ অর্থনীতির কারণে আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতিও গতিশীল আছে। মহামারীর সময়ও কৃষি আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছে। অনেকেই শহর থেকে গ্রামে গিয়ে কর্মসংস্থান খোঁজে বের করেছে। আমরা যে এখনো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে গতিময় দেশ, বড় কারণ আমরা কৃষিতে খুব ভালো করেছি। ভবিষ্যতে কৃষির মার্কেটিংয়ে খুব জোর দিতে হবে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ওপরও খুব জোর দিতে হবে। যাতে কৃষক জানতে পারে তার পণ্যের দাম কখন ভালো, কখন মন্দ। এটা যেন বুঝতে পারে।