আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ২
মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা নেই
মো. আখতারুজ্জামান : করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠে বেসকারিখাতে বিনিয়োগ বাড়াসহ অর্থনীত স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে দেশের মুদ্রাবাজারে তারল্য ধরে রাখার নীতি অব্যাহত রাখতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও বর্তমানে দেশের যে অর্থনৈতিক অবস্থান রয়েছে তাতে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে মূল্যস্ফীতির কোনো আশঙ্কা নেই। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি করাসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারল্য ধরে রাখতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বর্তমানে ৮ শতাংশের একটু উপরে রয়েছে। এটা ১০ শতাংশে উন্নীত না হওয়ায় পর্যন্ত নীতিতে পরিবর্তন আসবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তারল্য ঠিক রাখতে যাচ্ছে। এটা ঠিক আছে। তবে তারা ব্যাংকগুলোকে একটা সময় নির্ধারণ করে দিতে পারে। যে এই সময়ের মধ্যে তাদের এই এই খাতে ঋণ বিতরণ করতে হবে। আর যদি তা না পারে তাহলে তারল্য ফেরত দিতে হবে। অন্যথায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে চিন্তা-ভাবনা তা বাস্তবায়ন হবে না। এখন যত দ্রুত বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো যায় ততোই আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো।
তিনি আরও জানান, করোনাকালে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের। আর করোনায় অর্থনীতি বাঁচিয়ে রেখেছে কৃষিখাত। তাই ঋণ বিতরণে এই দুই খাতকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি যে ব্যাংকগুলো ছোট ঋণ দিতে চায় না। কারণ এখানে তাদের বেশি পরিশ্রম করতে হয়। ব্যাংকগুলো যাতে এই মানষিকতা থেকে বেরিয়ে আসেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অব্যাহতভাবে কমছে। জানুয়ারিতে এটি ৮.৩২ শতাংশে নেমে এসেছে। যদিও চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ১১.৫ শতাংশ। একদিকে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া অন্য দিকে ব্যয়ের চাপ কম থাকায় সরকারের ব্যাংক ঋণ নেয়ার প্রবণতাও কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে এসেছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। অবশ্য ২০২০-২১ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের মুদ্রানীতিতেও এই একই লক্ষ্য ধরা ছিল।
করোনার ক্ষতি মোকাবেলায় প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের পাশাপাশি বাজার থেকে ডলার কিনে মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত তারল্য থাকায় স্বল্প সময়ের জন্য অন্য ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে হচ্ছে না। ফলে কলমানি সুদ হার ডিসেম্বর শেষে ১.৭৯ শতাংশে নেমে এসেছে।