আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ২
বিশে^ চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী, সস্তায় একমাত্র যোগানদাতা ভারত
বিশ^জিৎ দত্ত : চাল ক্রয়ের একমাত্র বাজার এখন ভারত। দেশে ক্রমবর্ধমান চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু কয়েক দফা চেষ্টা করেও সরকার ভারতের বাইরের কোনো দেশ থেকে চাল আমদানি করতে পারেনি। বেসরকারি ১৫ জন ব্যবসায়ীকে চাল আমদানির জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। তারাও ভারত ছাড়া কোনো দেশ থেকে চাল আমদানি করতে পারেনি। গতকাল পর্যন্ত বেসরকারি উদ্যোক্তারা ২ লাখ ৬০ হাজার টন চাল ভারত থেকে আমদানি করেছে বলে জানা যায়।
গতকাল সরকার ভারত ছাড়া ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে সাড়ে ৩ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। এ চাল কোন টেন্ডারের মাধ্যমে আনা হবে না। খাদ্য মন্ত্রণালয় ওই দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে চাল আমদানি করবে।
এ বিষয়ে ভিয়েতনাম খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ভিয়েতনাম ফুড অ্যাসোসিয়েশন চালের একটি তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে চালের যে মূল্য দেখানো হয়েছে, তাতে দেখা যায় শুধুমাত্র ভারতের বাজারেই চালের মূল্য কম রয়েছে। এ হিসাবে সরকার আগামীতে যদি উচ্চমূল্যের চাল আমদানি না করে তবে ভারত থেকেই চাল আমদানি করতে হবে।
ভিয়েতনামের ফুড অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী ভিয়েতনামে এক সপ্তাহে চালের মূল্য বেড়েছে প্রতিটনে ৫ থেকে ৭ ডলার। ভিয়েতনামে প্রতিটন চালের মূল্য ৫১৩ থেকে ৫১৭ ডলার। ৫ শতাংশ ভাংগা চালের মূল্য ৪৮৮-৪৯২ ডলার। ২৫ শতাংশ ভাংগা চালের মূল্য ৪৮৮ ডলার। সুগন্ধি চালের মূল্য ৫৬৩ থেকে ৫৬৭ ডলার। যদি ১ ডলার সমান ৮৫ টাকা হয় তবে পরিবহন খরচ ছাড়াই ভিয়েতনামের চালের কেজি হবে সাড়ে ৪২ টাকা। অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের ৫ শতাংশ ভাংগা চালের টন ৫০৮-৫১২ ডলার। এ হিসাবে থাইল্যান্ডের চালের মূল্য হবে পরিবহন খরচ বাদেই প্রায় ৪৪ টাকা। পাকিস্তানের চালের মূল্য প্রতিটন ৪৩৬ থেকে ৪৪২ ডলার। তাতেও চালের মূল্য প্রতি কেজিতে পড়ে ৪২ থেকে ৪৩ টাকা। এ হিসাবে ভারতের চালের মূল্যই সবচেয়ে কম। ভারতে প্রতি টন চালের মূল্য ৪৩৬ থেকে ৪৪২ ডলার। তবে এ চাল ২৫ শতাংশ ভাংগা। উল্লেখ্য, গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ভিয়েতনাম ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৬ লাখ ৪৭ হাজার টন চাল রপ্তানি করেছে। ভিয়েতনাম কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে তারা আরো চাল রপ্তানি করতে পারবে। তবে তারা আশা করছে, বিশে^ ক্রমবর্ধমান চালের চাহিদা বৃদ্ধিতে বর্তমান মূল্যেও এ চাল তারা রপ্তানি করতে পারবে না।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাজমানারা খাতুন জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ টনের মতো চাল তারা আমদানি করেছেন। যার বেশিরভাগই আমদানি হয়েছে ভারত থেকে। মায়ানমার থেকে ১ লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা হয়তো নাও আসতে পারে। তিনি মনে করেন, বিশ^বাজারে চালের যে মূল্য রয়েছে তাতে সরকার আমদানির উপর শুণ্য শুল্ক না করলে আমদানি করা চালের মূল্যও বেশিই থাকবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আপদকালীন মজুদ হিসাবে সরকারের গোডাউনে বর্তমানে সাড়ে ৫ লাখ টন চাল রয়েছে। যা গত বছরের আপদকালীন মজুদের চেয়ে প্রায় ৭ লাখ টন কম। সরকারের এ মজুদ কমের সুযোগে স্থানীয় চাল ব্যবসায়ীরা বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধি করেই চলছে। বাজারে চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায় ও মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজিতে। সরকার যদি চাল আমদানি করতে না পারে তবে এ দাম আরো বৃদ্ধি পাবে বলে অনেকেই মনে করছেন। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডিজি শহাজাহান কবির বলেন, আগামী দেড় মাস বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। এরপরে যদি প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হয় তবে বোরো ফসলের কারণে বাজারে চালের মূল্য কমতে পারে। তবে তিনি স্বীকার করেন বর্তমান বিশে^ ভারতই এ্কমাত্র সস্তা চালের যোগানদাতা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচিৎ হবে ভারত থেকে আরো চাল কিভাবে আমদানি করা যায় তার ব্যবস্থা নেয়া। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও