আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৫
নিকোলাস ক্রিস্টোফের কলাম সফলতা পেতে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের দিকে তাকাতে হবে
রাশিদ রিয়াজ : যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের দারিদ্র্যের পর্যায় থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক খাতে উন্নয়নের দিকে তাকানোর পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন কলামিস্ট নিকোলাস ক্রিস্টোফ। নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখা কলামে তিনি বলেছেন গণহত্যা, অশান্ত অবস্থা এবং দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে ৫০ বছর আগে এই মাসে জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের। তারপর থেকে প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশ ব্যতিক্রমী অগ্রগতি অর্জন করেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার অবিচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ি আর নিকোলাস তার নিজের বাংলাদেশকে দুর্ভাগা বলে মন্তব্য করার জন্যে এখন আপসোস করেছেন। বিশ্বব্যাংকের হিসেব দিয়ে বলেছেন করোনা মহামারির আগে চার বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রতি বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৭ থেকে ৮ ভাগ। এটা ছিল চীনের চেয়েও দ্রুত প্রবৃদ্ধির গতি। নিকোলাস বলেন বাংলাদেশে গড় আয়ুষ্কাল এখন ৭২ বছর। মিসিসিপির ১০টি কাউন্টিসহ যুক্তরাষ্ট্রের অল্প কয়েকটি জায়গার চেয়ে বাংলাদেশের এই গড় আয়ুষ্কাল বেশি। বাংলাদেশ হয়তো এক সময় হতাশার রূপ ধারণ করেছিল। কিন্তু কিভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করতে হয় তা বিশ্বাকে শিখাতে বাংলাদেশের কাছে যথেষ্ট কিছু আছে।
মার্কিন এই কলামিস্ট বাংলাদেশে এই গোপন রহস্য ফাঁস করে বলছেন এর উত্তর হলো শিক্ষা এবং বালিকারা। ১৯৮০র দশকের শুরুতে এক-তৃতীয়াংশেরও কম বাংলাদেশি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করতেন। বর্তমানে বাংলাদেশের শতকরা ৯৮ ভাগ শিশু স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে। লিঙ্গ বৈষম্য থাকলেও বাংলাদেশে এখন হাই স্কুলগুলোতে ছেলেদের তুলনায় মেয়ের সংখ্যা বেশি। বাংলাদেশ যেহেতু নারীদের শিক্ষিত এবং ক্ষমতায়িত করেছে, এর ফলে ওই সব নারী বাংলাদেশের অর্থনীতির স্তম্ভ হয়ে উঠেছেন। দেশটির গার্মেন্ট কারখানাগুলো নারীদের উন্নত সুবিধা দিয়েছে। এখন আপনি যে শার্ট পরছেন তা হয়তো তাদের কেউ একজন বানিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে চীনের পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তৈরি পোশাকের রপ্তানিকারক এখন বাংলাদেশ।
নিকোলাস তার কলামে বলেছেন, এটা ঠিক যে, পশ্চিমা ব্রান্ডগুলো বাংলাদেশে অবস্থিত এসব কারখানাকে কম দাম দেয়। এসব কারখানায় আছে নির্যাতন, যৌন হয়রানির মতো ঘটনা। আছে অগ্নিকা-ের ঝুঁকি। আছে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট আরো সমস্যা। তা সত্ত্বেও শ্রমিকরা নিজেরাই বলেন, মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হওয়া অথবা ধানক্ষেতে কাজ করার চেয়ে এসব কাজ অনেক ভাল। গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক এবং উচ্চ মাত্রায় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত উন্নয়নমূলক সংগঠনে অলাভজনক পদে কাজ করছেন শিক্ষিত নারীরা। তারা বাচ্চাদের টিকা দিচ্ছেন। তারা টয়লেট ব্যবহারকে উদ্বুদ্ধ করছেন। কিভাবে পড়াশোনা শিখতে হবে তা শিখাচ্ছেন গ্রামের মানুষদের। গর্ভনিরোধকের বিষয়ে তারা ব্যাখ্যা করছেন। বাল্য বিয়েকে তারা নিরুৎসাহিত করছেন।
নিকোলাসের মতে বাংলাদেশ হ্যাজ নট হ্যাড গ্রেট পলিটিক্যাল লিডারস। কিন্তু মানবের পিছনে এর যে বিনিয়োগ তা একটি গতিশীলতা সৃষ্টি করেছে, যেখান থেকে আমরা সবাই শিক্ষা নিতে পারি। ১৫ বছরে এ দেশটি থেকে দুই কোটি ৫০ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে তুলে আনা হয়েছে। শিশুদের অপুষ্টিতে ভোগার হার ১৯৯১ সাল থেকে প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে এই হার ভারতের চেয়েও কম। পাঠক হিসেবে মনে মনে বলছেনÑ অতিমাত্রায় জনসংখ্যার দেশটি অগ্রগতিকে আগের অবস্থায় নিয়ে যাবে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশি নারীদের এখন গড়ে দুটি করে সন্তান আছে। আগে এই সংখ্যা ছিল ৭। সংক্ষেপে বলতে হয়, বাংলাদেশ তার সবচেয়ে অব্যবহৃত সম্পদ তার দরিদ্র্যদের পিছনে বিনিয়োগ করেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রান্তিকরা এবং অনুৎপাদনশীলরা সবচেয়ে বেশি নজরে পড়েছেন। কারণ, এখান থেকেই সবচেয়ে বেশি রিটার্ন আসতে পারে। একই কথা সত্য হতে পারে আমেরিকার জন্যও। আমরা আমাদের বিলিয়নিয়ারদের কাছ থেকে অধিক পরিমাণ উৎপাদনশীলতা কমিয়ে আনতে যাচ্ছি না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে সাতটি শিশুর মধ্যে একজন শিশু, যারা অর্থের অভাবে হাইস্কুলের গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করতে পারে নাÑ যদি আমরা তাদেরকে সাহায্য করতে পারি, তাহলে এই দেশটি ব্যাপক সুবিধা পাবে।
এ কারণেই জো বাইডেন শিশুদের দারিদ্র্য দূর করার উদ্যোগ নিয়েছেন। হয়তো তিনি সেটা পারবেন। এ জন্যই এটা একটি কেন্দ্রীয় ইস্যু হয়ে উঠেছে। রিফান্ডেবল চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট স্থায়ীভাবে সৃষ্টি করা উচিত। বাংলাদেশ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রান্তিক পর্যায়ে থাকা শিশুদের পিছনে বিনিয়োগ শুধুই সহানুভূতি জানানো নয়। একই সঙ্গে তা জাতিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করে। (সংক্ষেপিত)