মাটির নিচে বিশ্বের একমাত্র আধুনিক শহর কুবার পিডি
দেবদুলাল মুন্না : পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড শহর থেকে ৮৪৬ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমিতে অবস্থিত এ ছোট শহর। কুবার পিডি শব্দের বাংলা অর্থ সাদা মানুষের গর্ত। এটি হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র মাটির তলার শহর। কুবার পিডি ছিল একসময় বর্ণালি পাথরের খনি। ১৯১৫ সালে খনি গুলো আবিষ্কারের পর এই শহরে খনি শ্রমিকদের আনাগোনা বেশ বেড়ে যায়। কারণ আর কিছুই নয়, এখানকার খনিজ সম্পদের লোভ। এরপর থেকে বিভিন্ন খনিজ সম্পদের সন্ধান পাওয়া যায়। ফলে খনি শ্রমিকরা অর্থ উপার্জন করতে করতে একসময় স্বচ্ছল হয়ে এটিকে একটি শহরে পরিণত করে। বর্তমানে এটি বিশ্বের সেরা পর্যটন নগরী। সবসময়ই লেগে থাকে পর্যটকদের ভিড়। ফলে পর্যটন খাতেও আয় বেড়েছে। ২০১৯ সালে করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে নেচার কনজারভেশন সোসাইটির হিসাব মতে এখানে প্রতিমাসে বাংলাদেশি টাকায় আয় ছিল ১৭ কোটি টাকা। এ টাকা শুধুমাত্র পর্যটনখাত থেকে। পাশাপাশি খনি থেকে বৈধ উপায়েও খনিজ আহরন চলছে। সূত্র : নেচার ম্যাগাজিন, এইসময়
এই ভুগর্ভস্থ শহরে রয়েছে চার্চ, শপ, আর্ট গ্যালারি, হোটেল, অফিস। এই শহরের সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হল এখানে কোন ঘাস দেখা যায় না, নেই কোন গাছ। সবুজ বলতে এখানে কিছু নেই শুধু আছে তৈলাক্ত বালি। এ শহরে এখন গরিব বলতে কেউ নেই। শহরের নগর পিতা ১৯৯৯ সালে নতুন আইন করেছেন এ শহরে নতুন কেউ জায়গা কিনে স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারবে না।
উপর থেকে বাড়িগুলি দেখতে অতি সাধারণ হলেও, নিচের অংশের ঘর যে কোনও বড় হোটেলের স্যুইটকেও টেক্কা দিতে পারে। স্বাভাবিক ভাবেই এই এলাকার হোম ট্যুরিজমও বেশ জনপ্রিয়। কুবার পিডি-তে এসে রাত্রিবাস করেন বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা। তবে বিনা অনুমতিতে এই এলাকায় প্রবেশ করা নিষেধ। আগাম অনুমতি নিয়েই আসতে হয় পর্যটকদের। ২০১৮ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এই শহরের জনসংখ্যা ১৬৯৫ জন (৯৫৩ জন পুরুষ, ৭৪২ জন নারী এবং অন্যান্য ২৭৪ জন)। দিনের তাপমাত্রা অত্যধিক হওয়ায় কুবার পিডির বাসিন্দা সাধারণত ঘরে থাকেন। রাতে কাজ করেন। রাতের বেলা গলফ খেলে থাকেন। শহরে একটি ফুটবল ক্লাবও আছে।
২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় কুবার পিডির পাশে আর্কারিনজা বাসিনে প্রচুর তেলের মজুদ আছে। গবেষণায় দেখা যায় এই মজুদ ৩.৫ এবং ২২৩ বিলিয়ন ব্যারেল তেল আছে যা অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বের অন্যতম তেল রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তাই অস্ট্রেলীয় সরকারও বিশেষ যতœ নিচ্ছে এ শহরের।
শহরের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যর জন্য এটি চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরও আকৃষ্ট করেছে। ২০০৬ সালে এই শহরকে নিয়ে তৈরি হয় উপল ড্রিমস নামে একটি চলচ্চিত্র। এছাড়া ১৯৯১ সালের আনটিল দ্য অ্যান্ড অফ দ্য ওয়ার্ল্ড, ১৯৯৪ সালের দি অ্যাডভাঞ্চার অফ প্রিসকিল্লা কুইন অফ দ্য ডেজার্ট। ডিসকভারি চ্যানেল ২০১২ সালে ২৯ সেপ্টেম্বর ও ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর এই শহর নিয়ে চারটি বিশেষ পর্ব প্রচার করে।