আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৪
সপ্তাহ ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা
মাসুদ মিয়া : চাল তেলের দাম কমছে না। এবার সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা বেড়ে বিক্র হচ্ছে ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা দরে। গত সপ্তাহ ছিল ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা। কোনো কারণ ছাড়াই হু হু করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় হতবাক ক্রেতারা। তারা বলছেন, চাল তেলের পাশাপাশি রমজানের আগেই কৌশলে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারগুলোতে দেখা গেছে, খুচরা দোকানির সঙ্গে পেঁয়াজ নিয়ে দামাদামি করছেন ক্রেতারা। লক্ষিবাজারে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, গত বুধবার ৩৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। সেই পেঁয়াজ আজ বিক্রয় করছি ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা। এই পেঁয়াজ এক সপ্তাহ আগে ৩৫-৪০ টাকা ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কম দামে পেলে কম দামে বেচি (বিক্রি), আর বেশি দামে আনলে (কিনলে) বিক্রিও করি বেশি দামে। আমরা কেজিতে এক-দুই টাকা লাভ করি, এর বেশি না। কয়দিন হলো পেঁয়াজের উৎপাদনের মৌসুম শেষ হয়েছে। এসময় পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর যৌক্তিক কোনো কারণ বলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, রোজার আগেই পরিকল্পিতভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পেঁয়াজের দাম বাড়াতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।
লক্ষিবাজারে কাঁচাবাজারে আসা এক ক্রেতা পেঁয়াজের দাম শুনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দুদিন আগেও ৩০ টাকা কেজি নিয়েছে, অথচ আজ ৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। লাভ করে ব্যবসায়ীরা, আমরা গরিবরা মাঠে মারা। এভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়বে জানলে, প্রতিদিন এক কেজি করে কিনে রাখতাম। রিপন মিয়া নামে এক ক্রেতা বলেন, রমজানে এমনিতেই তেল-চালের দাম বেশি থাকে। এখন নতুন করে রমজানের আগে পরিকল্পিতভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন বিক্রেতারা। আমার কোথায় যাব?
কারওয়ান বাজারের দেশি পেঁয়াজের আড়তদার আবুল কাশেম বলেন, স্থানীয় মহাজনরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। যে কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ঢাকার খুচরা ও পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই বলে জানা গেছে। ভোক্তারা জানান, এবার ব্যবসায়ীরা হয়ত কৌশল পরিবর্তন করেছে। রোজার সময় অনেক আলোচনা হয় বলে আগেভাগেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
রোজার এখনও অনেক দেরি। অথচ এখনই চাল, তেল, পেঁয়াজ, মুরগি, চিনি সব কিছুরই দাম চড়া। চাল-তেলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মুরগির চড়া দাম চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চালের দাম চড়া। এক কেজি মোটা চাল কিনতেই এখন খরচ হচ্ছে ৪৮-৫২ টাকা। আরেকটু ভালো মানের চাল কিনতে হলে ভোক্তাকে গুণতে হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও তা এখনও সম্ভব হয়নি। মুরগির দামও এখন চড়া চাল ব্যবসায়ী প্রতি চালের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা। ফলে চালের দাম কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বেড়েছে। তিনি বলেন, ৩২শ টাকার রশিদ নাজিরশাইলের বস্তা সাড়ে ৩২শ টাকা বিক্রি করছি। ২৪শ টাকার পাইজম ২৪৭০ টাকায় বিক্রি করছি। কেজি প্রতি চালের দাম বেড়েছে ১-২ টাকা টাকা। এদিকে সাধারণ মানুষ যে ব্রয়লার মুরগির ওপর নির্ভর করবে, সে সুযোগও কমে আসছে। কারণ প্রতি কেজি মুরগির দাম এখন ১৫৫-১৬০ টাকা। যা মাসখানেক আগেও ছিল ১৩০-১৩৫ টাকা।
এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাবে দেশের বাজারে তেলের দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ অস্থিরতা ঠেকাতে গত মাসের মাঝামাঝিতে সরকার সয়াবিন ও পাম ওয়েলের দাম নির্ধারণ করে দেয়। সে দাম অনুযায়ী, বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১৩৫ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার পাম ওয়েল বিক্রি হচ্ছে ১০৪ টাকায়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাবে দেশের বাজারে তেলের দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে এর মধ্যে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা নতুন করে তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে, যা যাচাই-বাছাই করছে জাতীয় পর্যবেক্ষণ ও মূল্য নির্ধারণ কমিটি। কমিটি সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় বাজারে তেলের দাম আরও এক দফায় বাড়বে। সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকারকে এখন চেষ্টা করতে হবে পণ্যগুলোর দ্রুত সরবরাহ বাড়ানো। তাহলে হয়ত বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। না হলে ভোক্তাদের ভোগান্তি কমার সুযোগ দেখছি না। গত সপ্তাহের মতো এখনো বাজারে সব থেকে দামি সবজির তালিকায় রয়েছে পটল ও ঢেঁড়স। পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়। শশার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকায়। এছাড়া, মুলার প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২৫ টাকা, বেগুন ২০ থেকে ৩০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, গাজর ১৫ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফুলকপি, বাঁধাকপির ও লাউয়ের দামও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা
আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮ টাকা। লক্ষ্মীবাজারে ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, শীতের সবজির সরবরাহ এখনও ভালো আছে। তাই তুলনামূলক কম দামেই সবজি কিনতে পারছেন ক্রেতারা। তবে আর খুব বেশিদিন এই দামে সবজি পাওয়া যাবে না। টমেটো, কপির সরবরাহ কমে আসলেই সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে যাবে। অপরিবর্তিত মাছের বাজার। গত সপ্তাহের মতো প্রতি কেজি রুই মাছের দাম (আকারভেদে) ১৮০ থেকে ৩৫০ টাকায়, মাগুর মাছ ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, মৃগেল ১১০ থেকে ১৫০ টাকায়, পাঙ্গাস ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, ইলিশ প্রতি কেজি (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে হাজার টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, কাতল ১৭০ থেকে ২৮০ টাকায়, ফোলি মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, পোয়া মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়, পাবদা মাছ ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায়, টেংরা মাছ ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়, টাটকিনি মাছ ১০০ টাকায়, তেলাপিয়া ১৪০ টাকায়, সিলভার কার্প ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়, দেশি কৈ মাছ ১৫০ থেকে ৭০০ টাকা, কাঁচকি ও মলা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, আইড় মাছ ৫০০ টাকায়, রিডা মাছ ২২০ টাকায় ও কোরাল ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়, গুড়া বেলে ১২০ টাকায়, রূপ চাঁদা মাছ কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।