আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করলেন সরকারকে দেশ কি খাদ্যঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে?
প্রিয়াংকা আচার্য্য : আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী কোনও দেশের খাদ্য মজুদ ১৩.৫ লাখ মেট্রিক টনের নিচে নেমে গেলে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশে গত কয়েক মাস ধরে ক্রমাগতভাবে সরকারিভাবে খাদ্য মজুদ কমছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সামাজিক সুরক্ষা ও অন্যান্য সরকারি কর্মসূচির আওতায় খাদ্যশস্য বিতরণ অব্যাহত থাকায় এবং ধীরগতিতে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করায় গত বছরের জুন থেকে সরকারের মজুদ কমতে শুরু করে। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের ৮ মার্চ পর্যন্ত খাদ্যশস্যের সরকারি মোট মজুদ ৬ দশমিক ২৬ লাখ মে. টন। এর মধ্যে চাল ৫ দশমিক ২৮ লাখ মে. টন এবং গম শূন্য দশমিক ৯৮ লাখ মে. টন। যা গতবছরের ১৬ মার্চ ছিল ১৭ লাখ ৫১ হাজার টন। চাল ১৪ লাখ ২৯ হাজার টন এবং গম রয়েছে ৩ লাখ ২২ হাজার টন। আর ২০১৯-এর জুনে খাদ্য মজুদ ছিল ১৬ লাখ ৭৪ হাজার টন। এদিকে আজ শেষ হয়েছে সরকারের আমন ধান সংগ্রহ কার্যক্রম। চলতি অর্থবছরের জন্য আমন মৌসুমে ৮.৫ লাখ টন ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়ে ৮ মার্চ পর্যন্ত ৬৬ হাজার ৮৮ মে. টন আমন সিদ্ধ চাল, ৪ হাজার ৭২০ মে. টন আতপ চাল এবং আমন ধান ১১ হাজার ৯৬৬ মে. টন আমন ধান সংগৃহীত হয়েছে। যা চালের আকারে সর্বমোট দাঁড়ায় ৭৮ হাজার ৭৬১ মে. টন। অর্থাৎ সংগ্রহের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশেরও কম হয়েছে।
এ বিষয়ে আমাদের অর্থনীতিকে খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগের পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান বলেন, আমন ধান সংগ্রহের ব্যর্থতা একটি পুরানো খবর। এনিয়ে বহুভাবে লেখা হয়েছে। এখন যা কিছু বলা হবে তা সবই চর্বিত চর্বন। বাজার চড়া তাই সরকারি দামে চাল পাওয়া যায়নি। লক্ষ্য পূরণ হবে কী করে? ফলে বাড়তি সময় দিয়েও কাজ হয়নি।
জানুয়ারিতে মজুদ সংকটের জন্য যেন খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে না পরে সেজন্য সরকার ১৪ লাখ টন খাদ্য আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, সরকার মজুদ বাড়ানোর জন্য দশ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ৪ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করবে। এ আমদানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। একইসঙ্গে বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেসরকারি চাল আমদানির শুল্কও হ্রাস করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে সেই প্রভাব পড়েনি। গত কয়েক মাস ধরে চালের দাম অব্যাহতভাবে বাড়তেই থাকে। তবু লাভবান হয়নি কৃষক। বরাবরের মতো মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের পকেটেই যাচ্ছে লাভের গুড়। আসছে বোরো মৌসুম। গত বছরের চেয়ে এবার ১ লাখ হেক্টর বেশি জমিতে হয়েছে বোরোর চাষ। তবু চালের দাম কমা বা খাদ্য মজুদ বাড়া নিয়ে দ্বিধা যেন কাটছে না।
অপরদিকে খাদ্য মজুদ কম থাকায় টেস্ট রিলিফ ও কাজের বিনিময় খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচিতে চাল ও গমের পরিবর্তে নগদ টাকা দেওয়া শুরু করেছে সরকার। তবে বিশেষজ্ঞরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, এতে অনিয়ম অংকে কমবে। তবে প্রাপক তার প্রাপ্য টাকা পাচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘প্রতিবছরই আমন ও বোরো ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ হয়। এর কারণ অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতা। কৃষি মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয় পরস্পরকে দোষারোপ করে। আসলে সঠিক সময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিলম্বের কারণেই প্রতিবার এমন সমস্যার তৈরি হয়। ফলে স্থানীয় বাজারে চালের মূল্য বাড়ে। এর ফলে একদিকে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়, অন্যদিকে সাধারণ ভোক্তারা না অতিরিক্ত দামে চাল কিনতে বাধ্য হয়।’
‘সামনে বোরোর মৌসুম আসছে। সরকারের উচিত অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বোরো ধান সংগ্রহ করা। একইসঙ্গে বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যেন কৃষক ও সাধারণ ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’