আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৪
দুইমাসে সর্বোচ্চ করোনা শনাক্ত নড়েচড়ে বসছে প্রশাসন
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : দেশে দুই মাস পর করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর হার সর্বোচ্চ হয়েছে। আর ১৯ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে মৃতের সংখ্যা। গত কয়েক দিন ধরে আক্রান্ত ও মৃতের হার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় উদ্বিগ্নতা দেখা গেছে সচেতন মহলে। তবে বিশেষজ্ঞরা সকলকে উদ্বিগ্ন না হয়ে সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্য সচেতনতা মেনে চলার দিকে নজর দিতে বলেছেন।
শীত কমার সঙ্গে করোনা সংক্রমণের হারও কমতে থাকলে আম-জনতার মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা মানার ক্ষেত্রে শিথিলতা করতে দেখা যায়। রাস্তা-ঘাটে বা অফিস-আদালতে চলাচলের সময় মাস্ক না পরা, সামাজিক দূরত্ব না মানার প্রবণতা এখনও চলছে।
এরই মধ্যে করোনার দ্বিতীয় স্ট্রেইন আসায় সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় নির্দেশনা চলে এসেছে। গত শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) চিঠি দিয়েছে।
রোববার রাজধানীর গুলিস্তান, ফার্মগেইট, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুরসহ কয়েকটি স্পট ঘুরে দেখা যায়, জনসাধারণের একটি অংশ এখনও মাস্ক ছাড়া চলাচল করছে। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব মানার কথা ভাবছেও না। দেশের প্রশাসনিক কর্মক্ষেত্রের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে সরেজমিনে গেলে সেখানে প্রত্যেককেই মাস্ক পরে ভেতরে ঢুকতে দেখা যায়। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও সামাজিক দূরত্ব যথাসম্ভব পালনে তৎপর থাকতে লক্ষ্য করা গেছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) পর্যন্ত ১৬ হাজার ২০৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১শ ৫৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর মারা গেছেন ১৮ জন। এই ১৮ জনের মধ্যে ১২ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল। মৃতদের মধ্যে ১০ জন ঢাকা বিভাগের, ৫ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ২ জন রাজশাহী বিভাগের, ১ জন বরিশাল বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। এর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি একদিনে ১৮ জন মারা গেলেও ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মৃত্যুর সংখ্যা ওঠানামা করলেও আর বাড়েনি।
গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার ছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৫ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ১১ হাজার ৬৯৫ জন। দেশে ১৩ মার্চ করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১২ জন, ১২ মার্চ ১৩ জন, ১১ মার্চ ৬ জন, ১০ মার্চ ৭ জন, ৯ মার্চ ১৩ জন, ৮ মার্চ ১৪ জন, ৭ মার্চ ১১ জন, ৬ মার্চ ৬ জন, ৫ মার্চ ৭ জন, ৪ মার্চ ৭ জন, ৩ মার্চ ৫ জন, ২ মার্চ ৭ জন, ১ মার্চ ৮ জন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের শেষদিকে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার এক বছর পর গত ৭ মার্চ শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে গত বছরের ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু। আর ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত।
এদিকে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ৩৩তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৪১তম অবস্থানে।