ন্যূনতম শিক্ষা ব্যতীত একটি দেশ কোনোদিন উন্নত হতে পারে না
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
স্ত্রী নির্যাতনের হারে বিশ্বে চতুর্থ বাংলাদেশ। নলেজ ইনডেক্সে বাংলাদেশ কেবল বিশ্বে না, দক্ষিণ এশিয়ারও তলানিতে। দুর্নীতিতে বাংলাদেশ সর্বদাই বিশে^ তলানিতে। শিক্ষার মানের দিক থেকেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ারও তলানিতে। বিশ্বে বায়ু দূষণে ঢাকার অবস্থান তলানিতে। গবেষণায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে একদম শেষের দিকে। ইন্টারনেট, মোবাইল ডাটার গতির দিক থেকেও বাংলাদেশ পৃথিবীতে একদম তলানিতে। এমনকি ইথিওপিয়া কিংবা সোমালিয়ারও নিচে। প্রতারকের ঘনত্বের ইনডেক্স ধরলে আমরা সেখানেও খুব ভালো ফলাফল করতাম। মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, শিশু মৃত্যু হার, স্যানিটেশন, শিশুশ্রম ইত্যাদি কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি ব্যতীত আমাদের উন্নতি কোথায় হয়েছে আমি দেখি না। কেবল শার্ট আর প্যান্ট সেলাই করে যে বিশ্বে উচ্চ আসনে পৌঁছানো সম্ভব না সেটা আমরা কবে বুঝবো? দুবাই কিংবা দোহা এয়ারপোর্টে নামলে দেখা যায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা কি বেতনে কেমনতর জীবনযাপন করে দেশে টাকা পাঠায়। নেপালের শ্রমিকরা ওসব দেশে একটু বেটার জব করতে যায় এবং সেটা যায় মাত্র ১ লাখ টাকা খরচ করে। আর আমাদের শ্রমিকরা ৬ গুণ বেশি খরচ করে গিয়ে ৩ ভাগের এক ভাগ বেতনে অত্যন্ত পরিশ্রমী চাকরি করে। আমাদের অনেক নারী শ্রমিক বর্বর শেখদের কামনার শিকার হয়, লাশ হয়ে ফিরে আসে। এসব কি সম্মানের?
আমার বুঝতে শেখার পর থেকে আজ পর্যন্ত এমন একটি সরকার পাইনি যে, উন্নয়নের সঠিক সংজ্ঞা জেনে দেশকে সেই উন্নয়নের পথে ধাবিত করেছে। আমাদের সরকারগুলো কেবলই অবকাঠামো উন্নয়নের মাঝেই দেশের উন্নয়ন খুঁজেছে। সত্যিকারের টেকসই উন্নয়ন করতে হলে প্রথমে দেশের মানুষকে সঠিক শিক্ষায় আলোকিত করতে হবে। এ একটা কাজ করলে বাই ডিফল্ট আমাদের অন্য অনেক সমস্যা সমাধান হয়ে যেতো। আমরা কতোটা সভ্য আর কতোটা দেশপ্রেমিক তা খুঁজতে খুব বেশি দূর যেতে হবে না। আমরা ঘর থেকে দুই পা ফেলে রাস্তায় নামলেই টের পাই। রাস্তায় নামার সঙ্গে সঙ্গেই বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ থেকে শুরু করে ট্রাফিক জ্যাম ইত্যাদি সব আমাদের জীবনকে বিষিয়ে তুলছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি খরচে প্রতি কিলোমিটার রাস্তা বানাই আমরা। আর সে রাস্তা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে নি¤œমানের। এতে শুধুই কি টাকার অপচয় হচ্ছে? না, একই সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগও চরমে উঠে। রাস্তা বা অবকাঠামো নির্মাণ সবচেয়ে ব্যয়বহুল কেন? কারণ দুর্নীতি। দুর্নীতি করে আপাতদৃষ্টিতে যে করছে, সে ভাবছে ভালো আছে। সে যে তার চেয়ে আরো বড় বড় দুর্নীতিবাজদের শিকার হচ্ছে সেটি বোঝার ক্ষমতা পর্যন্ত নেই। সমাজ একটি কো-অপারেটিভ সিস্টেম। এখানে সকলে মিলে একেকজন একেকটি কোষের মতো হয়ে একটি প্রাণের মতো হতে হয়। এটা বুঝতে হলে ন্যূনতম যে শিক্ষা দরকার এটা ব্যতীত একটি দেশ কোনোদিন উন্নত হতে পারে না। কেবল চোখ মেলে তাকিয়ে আমাদের সাংবাদিকদের দেখুন। প্রত্যেক সাংবাদিক এবং প্রত্যেকটি সংবাদপত্র কেবল নিজে ভালো থাকার জন্য সত্য বলা বা লেখা থেকে বিরত থাকে। প্রত্যেক শিক্ষক কেবল নিজে ভালো থাকার জন্য যেভাবেই হোক উপরি উপার্জন বা উপরি সুবিধার দিকে তাকিয়ে থাকে। একই কথা খাটে সমাজের অন্য সকল প্রফেশনের ক্ষেত্রে। তাহলে দেশ উন্নত হবে কি কারণে?
লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।