বায়ুদূষণ রোধে সরকারের কঠোর নির্দেশনা আসছে শিগগিরই
প্রিয়াংকা আচার্য্য : বিশ্বে বায়ু দূষণের দিক দিয়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা প্রায়ই শীর্ষে অবস্থান করে। এমন অবস্থা উত্তরণেই আসছে সরকারি নির্দেশনা। নির্দেশনা অমান্য করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তর মোবাইল কোর্ট করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
শিল্পায়নের ফলে গত কয়েক বছরে আশঙ্কাজনক অবস্থানে আছে রাজধানীর বায়ু দূষণের হার। গতবছর করোনা সংক্রমণ রোধে লক ডাউন চললে বায়ু দূষণের হার অনেক কমে। পরবর্তীতে কলকারখানা চালু হলে আবারও বায়ু দূষণ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশে^র বায়ু দূষণ নিয়ে রিয়েল টাইম এয়ার কোয়ালিটি সূচকে ঢাকার অবস্থান এখন ১৭৭তম।
বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থার সমন্বয়ে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/ বিভাগসমূহের করণীয় নির্ধারণ করে চূড়ান্ত নির্দেশিকা (গাইড লাইন্স) প্রণয়ন করা হয়েছে। এরইমধ্যে এ নির্দেশিকা কার্যকর হওয়া শুরু হলেও লিখিত আকারে তা শিগগিরই প্রকাশ করতে যাচ্ছে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
নির্দেশনায় বলা হয়Ñ ইটের বিকল্প হিসেবে ব্লক ব্যবহার করতে হবে। ব্লক তৈরিতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানদের প্রণোদনা দিয়ে উৎসাহিত করতেও বলা হয়। বায়ু দূষণরোধে প্রতিষ্ঠানসমূহে নিজস্ব ব্যবস্থপনা থাকতে হবে। রাস্তায় বিটুমিন না পুড়িয়ে মিনি অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হবে। মাটি বা বালি বহনকারী ট্রাক শহরে প্রবেশের পূর্বে চাকা পরিষ্কার করতে হবে। গাড়ির ইকোনমিক লাইফ যাচাই করা এবং ইকোনমিক লাইফ বিহীন রাস্তায় চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আনা।
গাড়ি নিঃসৃত কালো ধোঁয়া পরিহারের জন্য ইমিশন টেস্ট করতে হবে। বিআরটিএ থেকে ইমিশন টেস্ট এর মাধ্যমে প্রতিটি গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়ার পরিমান উল্লেখ করতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে। সমন্বয়হীন রাস্তা খোঁড়াখুড়ি বন্ধ করে ঢাকা শহওে কমন ইউনিটি ডুয়েট স্থাপন করতে হবে। যেকোনও নির্মাণের ক্ষেত্রে ডাস্ট সাকার বা ভ্যাকিউম ক্লিনার থাকতে হবে। সর্বোপরি, বায়ু দূষণ রোধকল্পে প্রস্তাবিত মনিটরিং টিম বা ভিজিল্যান্স টিমে সিভিল সোসাইটিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে দেশে বায়ু দূষণের উৎস নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্ব ব্যাংক। সেখানে বায়ু দূষণের প্রধান তিনটি উৎস হিসেবে ধরা হয়Ñ ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও নির্মাণ কাজ। রাজধানীর ৫০ ভাগ বায়ু দূষণের জন্য দায়ী যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া। ক্রমশ এ মাত্রা ভয়াবহ দিকে যাচ্ছে। বসবাসের পরিবেশ হচ্ছে অনুপযোগী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার বাতাসে ৬ ধরনের পদার্থ ও গ্যাসের কারণে দূষণের মাত্রা বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন, কার্বন মনোঅক্সাইড, সিসা এবং দুটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা, যেগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। এগুলোর উপস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই বায়ু মান যাচাই করা হয়। আর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এই পদার্থগুলোই শরীরে প্রবেশ করে।
শুধু তাই নয়, বায়ু দূষণ প্রকৃতি-পরিবেশ-প্রাণী জগতের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা, অ্যালার্জি, হাঁপানির আক্রমণ, কনজাংটিভাইটিস, ব্রংকিয়াল রোগ, ফুসফুস বা ত্বকের ক্যান্সার, দৃষ্টি সমস্যা, শিশুর মানসিক বিকাশে রক্তের সমস্যা, গর্ভবতী নারী, শিশু এবং বয়স্করা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
একটি গবেষণার প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বে যেসব কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, তার মধ্যে বায়ুদূষণ রয়েছে পঞ্চম স্থানে। ২০১৫ সালে বায়ু দূষণের কারণে পৃথিবীতে ৮৮ লাখ মানুষ মারা যায়।
এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে রাজধানী দিল্লিতে বায়ু দূষণে ২০২০ সালে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমস জানিয়েছে, লকডাউনের মধ্যেও বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবে নয়াদিল্লিতে মৃত্যুর হার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ছিল। ভারতের আরও কয়েকটি শহর মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ বায়ু দূষণে মারা গিয়েছে।