‘কফিন খুলতেই দেখি জাতির পিতার পরনের লুঙ্গি ও সাদা জামা রক্তাক্ত হয়ে আছে’
আসাদুজ্জামান বাবুল : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। হত্যার পরদিন ১৬ আগস্ট মহান নেতার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নিজ গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ায়। সেনা সদস্যদের কড়া পাহারায় স্থানীয় ৫/৭ জন লোক জাতির পিতার কফিন ঘাড়ে করে নিয়ে যায় তার বাড়ির উঠানে। এ সময় রাস্তার দু-পাশে দাঁড়িয়ে এবং বিভিন্ন গাছপালার ওপরে ওঠে থাকা নানান বয়সের মানুষগুলো প্রিয় মানুষটির মরদেহ এক পলক দেখতে ভিড় করেছিলো। একই জায়গায় ভিড় করেছিলো নানান বয়সের শত শত শিশু-কিশোর-তরুণ-তরুণী। কিন্তু ঘাতকের দল তাদের প্রিয় মানুষটিকে এক পলক দেখতে দেয়নি। বরং মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বলেছিলো, এলাকা ছাড়ো সকলে, নইলে তোমাদেরও অনুরূপভাবে মেরে ফেলা হবে। সেনা সদস্যদের এমন বার্তায় টু-শব্দটুকুও সেদিন করতে পারেনি জাতির পিতার স্বজনসহ-ভক্তরা। এরপর একটি ভাঙা বালতিতে করে বাড়ির পাশের পুকুর থেকে ময়লা পানি আর দোকান থেকে ৫৭০ একটি সাবান কিনে গোসল করিয়েছিলো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতাকে। খুব তড়ি-ঘড়ি করে গোসল করায়ে রেড়ত্রিসেন্ট হাসপাতালে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া রিলিপের লাল পাড়ের কাপড় পড়িয়ে কোনোমতে নামাজে জানাজা শেষ করে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের স্থাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সে কথা মনে পড়লে আজও শিউরে ওঠে গা। কান্না জড়িত কণ্ঠে কাঠমিস্ত্রী আইয়ুব আলী বলেন, কফিনে ভরা জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কফিনের পেরেক খুলতে সেদিন সেনা সদস্যরা আমাকে ডেকেছিলো। কফিন খুলতেই দেখি জাতির পিতার পরনের লুঙ্গি ও সাদা জামা রক্তাক্ত হয়ে আছে। এরপর দেখতে পেলাম শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বুলেটের আঘাত। ঝাঝরা বুক দেখে আমি প্রায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। এরপর সেনা সদস্যদের হুমকির মুখে আমার সারা শরীর কাঁপতে থাকে। প্রিয় নেতার কফিন খুলতে হবে এবং দাফন করতে হবে বুঝতে পেরে কফিন খুলে ফেললাম। তারপর গোসল করিয়ে নামাজে-জানাজা শেষে মহান নেতার বাবা-মায়ের পাশে চির নিদ্রায়-শায়িত করা হলো। আইয়ুব আলী বলেন, সেদিনের সে কথা মনে পড়লে আজও গা শিউরে উঠে। সেনা সদস্যরা গোসল না করিয়ে বঙ্গবন্ধুর দাফন কাজ খুব অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করতে বলেছিলো। কিন্তু ইমাম সাহেব তাতে রাজি না হওয়ায় সেনা সদস্যরা দাফনের জন্য আধা ঘণ্টা সময় বেধে দিয়েছিলো। তাদের বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর দাফন সম্পন্ন করা হয়েছিলো।