
টাকা পাচার বন্ধ করা কোনো দেশের পক্ষেই সম্ভব নয় : আবু আহমেদ

শাহিন হাওলাদার : টাকা পাচার করা একটি আন্তর্জাতিক প্রবণতা। পৃথিবীর সবদেশের মানুষই কম-বেশি টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত। কোনো দেশই টাকা পাচার বন্ধ করতে পারেনি বাংলাদেশও পারবে না, সম্ভবও না। অবৈধ টাকা এবং বিনিয়োগের নিরাপদ পরিবেশ না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশের টাকা সবচেয়ে বেশি পাচার হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে টাকা নেওয়া খুব কঠিন। বাংলাদেশের ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্টও কনর্ভাটেবল না। অর্থাৎ টাকা অন্যদেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাড় পাওয়া কঠিন। ট্যুরিস্ট ও মেডিকেল উদ্দেশ্যে বেশি টাকা নেওয়া যায় না। লাখ লাখ ডলার নিতে গেলে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করতে হয়।
বাংলাদেশে ট্যাক্সের হার বেশি হওয়ায় বিদেশি কোম্পানিগুলো যে দেশে ট্যাক্স কম সেখানে টাকা রাখে। তাই বাংলাদেশে ট্যাক্সের হার কমানো উচিত। বৈধভাবে টাকা অন্য দেশে নেওয়ার প্রক্রিয়াগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সহজ করে দেওয়া উচিত। বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্র সীমিত তাই এগুলো প্রসারিত করা দরকার। বাংলাদেশে গোল্ড মার্কেট এখনো উন্নতি করতে পারেনি, কমিউডিটি মার্কেট নেই, রিয়েল স্টেট ব্যবসাও সীমাবদ্ধ। তাই এতো সীমাবদ্ধতার মধ্যে ধনী লোকেরা বাংলাদেশে টাকা রাখতে চায় না। ধনী লোকেরা মনে করেন বাংলাদেশে টাকা রাখা নিরাপদ নয়। আবার তাদের অধিকাংশের কালো টাকা। কালো টাকা তারা এখানে প্রকাশ না করে পাচার করে দেয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম-কানুনের সীমাবদ্ধতার কারণে বৈধ টাকাও দেশের বাহিরে নেওয়া যায় না। মানুষ তার পছন্দ অনুযায়ী বাজার পরিবর্তন করতে পারে না। বাংলাদেশে শেয়ার বাজার খারাপ গেলে গোল্ড মার্কেটে যাওয়া অনেক কঠিন। বিদেশে বিকল্প বিভিন্ন বাজারের ব্যবস্থা আছে। তাছাড়া বাংলাদেশে গোল্ড মার্কেটই নেই। বাংলাদেশে ঘর-বাড়ির একটা মার্কেট আছে, সেক্ষেত্রে নিজের জিনিস নিজেই বিক্রি করতে হয় কোনো ব্রোকার সিস্টেম নেই। বাংলাদেশে এসব সিস্টেমের কোনো উন্নতি করা হয়নি। বাংলাদেশের মার্কেটগুলোকে গ্লোবাল মার্কেটের সঙ্গে সেতুবন্ধন করে দিতে হবে।
শুধু গার্মেন্টস দিয়ে বাংলাদেশ বেশি সুবিধা করতে পারবে না। যখন ধনী লোকেরা মনে করবে বাংলাদেশ থেকে সহজে টাকা আনা-নেওয়া করা যায় তখন তারা টাকা রাখবে। বাংলাদেশের কিছু ধনী লোকেরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া ও ঘর-বাড়ি ক্রয় করার জন্য টাকা পাচার করে। এগুলো আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর কোনো দেশই এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। সুতরাং বিদেশে টাকা পাচার একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু। তবে টাকা পাচার সহনীয় পর্যায়ে রাখা নির্ভর করে একটি দেশের প্রশাসন ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার ওপর। আমরা যদি ভালো কিছু না করতে পারি তাহলে টাকা পাচার অব্যাহত থাকবে। তবে কিছু টাকা সব সমই পাচার হবে কারণ টাকা পাচার হচ্ছে একট বড় বাণিজ্য।
যুক্তরাষ্ট্র কখনোই তার নাগরিকদের জিজ্ঞাসা করে না তোমার টাকা কোথা থেকে এলো। কারণ টাকা পাচার হলে তাদের লাভ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে টাকা নিয়ে আসাও সহজ। থাইল্যান্ডেরও একই অবস্থা, তারা টাকা পাচার নিয়ে মাথা ঘামায় না। তাদের নাগরিকরা সহজেই বিভিন্ন দেশে টাকা আনা-নেওয়া করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হবে, দেশের দ্বন্দ্ব-সংঘাত কমে যাবে, সামাজিকভাবে শান্তি থাকবে, রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ হবে তখনই ধনী লোকেরা বাংলাদেশে টাকা রাখতে শুরু করবে। একটি নিরাপদ বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ব্যবসার জন্য স্বাধীন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যর সঙ্গে সেতুবন্ধন করতে হবে। তাহলে টাকা পাচারের পরিমাণ কমে যাবে।
