সবজির বাজারে স্বস্তি থাকলেও বেড়েছে সয়াবিন তেল
মাসুদ মিয়া: রাজধানীর সপ্তাহ ব্যবধানে পেঁয়াজের কেজিতে দাম কমেছে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা। পেঁয়াজের দাম কমলেও বেড়েছে আলুর দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে আলুর দাম কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। এছাড়া বাড়তি দামে বিক্র হচ্ছে তেল ও চালের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাবে দেশের বাজারে তেলের দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটার ৫ টাকা বেড়ে প্রতি লিটার বিক্রয় হচ্ছে ১৩৫ টাকা থেকে ১৪০ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার পাম ওয়েল বিক্রি হচ্ছে ১০৮ টাকায়। প্রায় দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চালের দাম চড়া। এক কেজি মোটা চাল কিনতেই এখন খরচ হচ্ছে ৪৮-৫২ টাকা। আরেকটু ভালো মানের চাল কিনতে হলে ভোক্তাকে গুণতে হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা। সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও তা এখনও সম্ভব হয়নি। মুরগির দামও এখন চড়া। এদিকে বাজারে নতুন আসা সজনে, পটল ও ঢেঁড়সের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে। তবে অন্যান্য সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে সজনের দাম কেজিতে কমেছে ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। আর পটল ও ঢেঁড়সের দাম কেজিতে কমেছে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। গত সপ্তাহে দুই দফা দাম বেড়ে পেঁয়াজের কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা বিক্রি হয়েছিল। আর আলুর দাম গত সপ্তাহে ছিল ১৮ টাকা যা ২ টাকা বেড়ে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দাম কমার বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, পেঁয়াজের একটু দাম বাড়ায় গত সপ্তাহে কিছু ক্রেতা বাড়তি কিনে মজুদ করেন। এতে পেঁয়াজের টান বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়ে গিয়েছিল। এখন দাম কমলেও বিক্রি কম হচ্ছে। তিনি বলেন, এবার পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার সম্ভাবনা খুব কম। কিছুদিন পর ভালো মানের নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। তখন পেঁয়াজের দাম আরও কমে যাবে। সুতরাং এবার রোজার ভেতর পেঁয়াজের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
এদিকে গত সপ্তাহে বাজারে নতুন আসা সজনের ডাটার কেজি বিক্রি হচ্ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা। যা এখন ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দাম কমার পাশাপাশি বাজারে সজনের ডাটার সরবরাহ ও বেড়েছে।
সজনে ডাটার পাশাপাশি কিছুটা দাম কমেছে পটল ও ঢেঁড়সের। গত সপ্তাহে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পটল ও ঢেঁড়সের দাম কিছুটা কমে এখন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বরবটি। এ সবজিগুলোই এখন বাজারের সব থেকে দামি।
বাকি সবজিগুলোর বেশিরভাগের দাম চলতি সপ্তাহে যেমন অপরিবর্তিত রয়েছে, তেমনি রয়েছে ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকা। শশার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
বেগুনের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, গাজরের কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই এ সবজিগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ফুলকপি, বাঁধাকপি ও লাউয়ের দামও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পিস। লক্ষ্মীবাজারে ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, শীতের সবজির সরবরাহ এখনও ভালো আছে। তাই তুলনামূলক কম দামেই সবজি কিনতে পারছেন ক্রেতারা। তবে আর খুব বেশিদিন এই দামে সবজি পাওয়া যাবে না। টমেটো, কপির সরবরাহ কমে আসলেই সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে যাবে।
এদিকে কয়েক সপ্তাহ ধরেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগি। গত সপ্তাহের মতো বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা এবং লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। তবে পাকিস্তানি সোনালি বা কক মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এই মুরগির কেজি বিক্রি হয় ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা। গরুর মাংস কেজিতে ১০ টাক বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা কেজি দরে। অথচ গত সপ্তাহে গরুর মাংসের দাম ছিল ৫৭০ টাকা। খাসির মাংস বিক্রয় হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি।
অপরিবর্তিত মাছের বাজার। গত সপ্তাহের মতো প্রতি কেজি রুই মাছের দাম (আকারভেদে) ১৮০ থেকে ৩৫০ টাকায়, মাগুর মাছ ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, মৃগেল ১১০ থেকে ১৫০ টাকায়, পাঙ্গাস ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, ইলিশ প্রতি কেজি (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে হাজার টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, কাতল ১৭০ থেকে ২৮০ টাকায়, ফোলি মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, পোয়া মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়, পাবদা মাছ ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায়, টেংরা মাছ ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়, টাটকিনি মাছ ১০০ টাকায়, তেলাপিয়া ১৪০ টাকায়, সিলভার কার্প ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়, দেশি কৈ মাছ ১৫০ থেকে ৭০০ টাকা, কাঁচকি ও মলা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, আইড় মাছ ৫০০ টাকায়, রিডা মাছ ২২০ টাকায় ও কোরাল ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়, গুড়া বেলে ১২০ টাকায়, রূপ চাঁদা মাছ কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।