ঊর্ধ্বগতি করোনা সংক্রমণ বেপরোয়া জনগণকে রুখতে আবারও মাঠে প্রশাসন
প্রিয়াংকা আচার্য্য : রাজধানীর শান্তিনগরের বাসিন্দা হোসনে আরা বানু ৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে ফার্মগেইট যাচ্ছেন আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে। পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে মা-মেয়ে পরে আছেন ট্রেন্ডি মাস্ক। তেজগাঁও রেলক্রসিংয়ে রিকশা থামতেই দেখলেন পাশের রিকশায় বসা এক লোক অনবরত কাশি দিচ্ছে। মুখে নেই মাস্ক। শঙ্কিত দৃষ্টিতে তিনি আশপাশে তাকাতেই দেখলেন অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাইও নেই।
এ দৃশ্য এখন দেশের প্রায় সর্বত্র। করোনার সংক্রমণ মাঝে কম থাকায় প্রশাসনের শিথিলতা দেখা গেলে জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা ভীষণভাবে বেড়ে যায়। গত কয়েকদিনে দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে ১০ শতাংশের উপরে চলে গেছে।
এদিকে পরিস্থিতি অবনতি হতে থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবারও সচেতনতা সৃষ্টিতে নানা কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়া শুরু হয়। ‘মাস্ক পরার অভ্যাস, কোভিডমুক্ত বাংলাদেশ’ শ্লোগানে রোববার থেকে দেশজুড়ে এই বিশেষ উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি শুরু করে পুলিশ।
উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর বিমানবন্দর, ফার্মগেট, শান্তিনগর ও শাহবাগ এলাকায় কার্যক্রম শুরু করে ডিএমপি। পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে মাস্ক।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) কৃষ্ণ পদ রায় সাংবাদিকদের বলেন, আশা করছি সবাই নিজের ঝুঁকি বুঝতে পেরে, বিপদ বুঝতে পেরে নিজ থেকেই সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।
একইসঙ্গে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও রোববার থেকে মাস্ক ব্যবহার করতে সচেতনতা অভিযান শুরু করা হয়। ডেপুটি কমিশনার এস কে মামুনুর রশীদ বলেন, মাঝখানে দেশে করোনা পরিস্থিতি অনেক কম থাকায় আমরা জনগণের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সচেতনতা তৈরির অভিযানটি বন্ধ রাখি। বর্তমানে পরিস্থিতির অবনতি হলে মন্ত্রিপরিষদ থেকে অভিযান পরিচালনা করতে নির্দেশনা দিলে আমরা আবারও মাঠে নামি।
ঢাকার ৫টি উপজেলা এবং মহানগরের কমলাপুর রেলস্টেশন, বিমানবন্দর রেলস্টেশন, বংশাল, সদরঘাট, সচিবালয়, জেলা জজ আদালত এলাকা, বায়তুল মোকাররম, লালবাগ, মিরপুর, শাহ আলী, হাতিরঝিল, শাহবাগ, জোয়ার সাহারা, খিলক্ষেতসহ মোট ১৫টি স্পটে জনবহুল স্থানে ঢাকা জেলা প্রশাসনের ১৫ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করার জন্য জনচেতনতা বৃদ্ধি ও মাইকিং করা হয়। এসময় দরিদ্রদের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয়। এছাড়াও, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মোবাইল কোর্টে ২৩৩টি মামলায় ২৩৩ জন ব্যক্তিকে মোট ৩৬ হাজার ৩৬০ টাকা অর্থদ- করা হয়।
সচেতনতা সৃষ্টিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আর কোনও কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই র্যাবের সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সরকারের যেসব নির্দেশনা আছে তা মানতে বাধ্য করছি। একইসঙ্গে খুব শীঘ্রই সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরতে উৎসাহী করতে আমরা আবারও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে যাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, রোববার দেশের ২০২০ সালের জিনোম সিকুয়েন্সগুলো নিয়ে একটি গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা ‘এলসেভিয়ার’ এবং নেদারল্যান্ডসের ‘ভাইরাস রিসাচ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, দেশের সার্স কভ-২-এর জিনোমে পাওয়া গেছে বেশ কিছু নতুন ধারার পরিবর্তন। গত এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই ভাইরাসের জিনোমে দেখা গেছে ৪ হাজার ৬০৪ রকমের ভিন্নতা। পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায়নি এ রকম নতুন ধারার পরিবর্তন, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ইউনিক মিউটেশন।
গবেষকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে পাওয়া গেছে ৩৪টি। এই মিউটেশনগুলোকে গবেষকরা নাম দিয়েছেন ‘বাংলা মিউটেশন’।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২৯ শতাংশে। করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ১৭২ জনের। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২২ জন। এর আগের দিন মারা গেছেন ২৬ জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন আট হাজার ৬৯০ জন। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।