চলচ্চিত্র বাণিজ্য ঈদ থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে পারে
ইমরুল শাহেদ : একবার রাজ্জাকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ঢাকার ছবির বাজেট কত হওয়া উচিত। তিনি কোনো দ্বিরুক্তি না করে জবাব দেন, ‘সিনেমার বাজারের অবস্থা এখন যা, তা দেখলে মনে হয়, ৬০-৭০ লাখ টাকার বেশি হওয়া উচিত না।’ তার এই বক্তব্য ছিল মৃত্যুর আগে। তিনি মারা গেছেন ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট। প্রায় চার বছরে চলচ্চিত্র ব্যবসায়ের আরও অবনতি হয়েছে।
আগে দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ১৩শ। শাকিব খান যখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেন তখন সিনেমা হলের নেমে এসেছে প্রায় দুশোতে। আর যখন সিনেমা হলের সংখ্যা ১৩শ ছিল তখন প্রতিদিন ৫০ থেকে ৫২ লাখ মানুষ সিনেমা দেখতেন। আর শাকিব খানের সময় দর্শক নেমে এসেছে আট থেকে ১০ লাখের মধ্যে। ১৩শ সিনেমা হলের তারকা হয়ে রাজ্জাক যে পারিশ্রমিক নিতেন তা উল্লেখ না করাই ভালো।
কিন্তু শোনা যায়, দুশো সিনেমা হলের তারকা শাকিব খান নাকি ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নিয়েছেন। নির্মাতারা কেন তাকে এতো টাকা দিয়ে ছবিতে নিয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। তবে তাকে সিনেমাতে নিলে যে নির্মাণ ব্যয়ের প্রয়োজন হয় তার অর্ধেক তুলে আনতে বেগ পেতে হয়। শাকিব খানকে ছবিতে নিয়ে প্রযোজকরা লোকসান দিতে রাজী আছেন। কিন্তু তারা নতুন কোনো তারকা তৈরি করতে রাজী নন। এভাবে চলচ্চিত্রশিল্প পঙ্গু হয়ে পড়েছে।
পরিস্থিতি উপলব্ধি করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, ‘শাকিব কিভাবে সুপার স্টার হলো? আমাদের সময়ে সিনেমা হলের সংখ্যা বেড়েছে। আর শাকিব খানের সময়ে সিনেমা হলের সংখ্যা কমেছে, দর্শক কমেছে।’
সিনেমা হল স্বল্পতা এবং দর্শক সংকটের মধ্যেই সবাই আশা করছেন চলচ্চিত্র আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। সকলে গুরুত্ব দিচ্ছেন সিনেমা হল বাড়ানোর জন্য। সরকারও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। সিনেমা হল যদি বাড়ে তাহলে দর্শকও বাড়বে। নতুন ছবি মুক্তি পেলে এই মহামারীর মধ্যেই দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
দেলোয়ার ঝন্টু পরিচালিত ‘তুমি আছো তুমি নেই’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর দর্শক ঝন্টুর নাম মাথায় রেখে এবং নায়িকা হিসেবে দীঘিকে দেখার জন্য প্রথম দিনের এক বা দুই শোতে জমায়েত হয়েছেন। কিন্তু ছবিটি উপভোগ্য না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত মুখ থুবড়ে পড়ে। মূলত বলতে গেলে একেবারে টেলিফিল্মের বাজেটে নির্মিত ‘তুমি আছো তুমি নেই’ ঢাকার চলচ্চিত্রের মানদ- নয়।
এখানে চলচ্চিত্রের দুঃসময়ে নির্মিত হয়েছে মনপুরা, আয়নাবাজি এবং পাসওয়ার্ডের মতো ছবি। এই তিনটি চলচ্চিত্র ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে উদাহরণ হয়ে উঠেছে। ঢাকার চলচ্চিত্রশিল্পকে পুরোপুরি থমকে দিয়েছে। বিনিয়োগ পুরোপুরি থেমে গেছে এবং একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হতে হতে এখন সংখ্যা নেমে এসেছে ৭৫ থেকে ৮০টির মধ্যে।
প্রদর্শকরা আশা করছেন. ভালো এবং দর্শক পছন্দের ছবি হলে তারা সিনেমা হলে ফিরে আসবেন। কারণ সিনেমা পর্দার বিকল্প কখনো হাতের এনড্রয়েড বা কোনো অ্যাপস হতে পারে না। সিনেমা হলে একটি চলচ্চিত্র যখন প্রদর্শিত হয় তখন সেটাকে চলচ্চিত্রই বলা হয়। আর অ্যাপসের মাধ্যমে পাওয়া চলচ্চিত্রকে বলা হয় কনটেন্টস। দর্শকরা চলচ্চিত্র দেখতে চায়, কনটেন্টস নয়। একজন প্রদর্শক নেতা বলেন, তারা তাকিয়ে আছেন আগামী ঈদের দিকে। তাদের প্রত্যাশা ঈদ থেকেই হয়তো চলচ্চিত্রশিল্প পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠবে।
কথা ছিল আগামী ঈদে অনন্ত জলিলের ‘দিন: দ্যা ডে’ মুক্তি পাবে। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে, ছবিটি মুক্তি পাবে ঈদুল আযহায়। এছাড়া ঈদের জন্য রেডি আছে ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘বিদ্রোহী’, ‘অন্তরাত্মা’ এবং আরও দু’একটি ছবি। এসব ছবির নির্মাতারা ঈদের কথা উল্লেখ করেই ঘোষণা দিয়েছেন। এসব ছবির সবগুলোই নির্মিত হয়েছে বড় বাজেটে। এসব ছবি বাণিজ্যিকভাবে উৎরে গেলে ছবির বাজার যে আবার ঘুরে দাঁড়াবে এবং সিনেমা হলের সংখ্যা বাড়তে শুরু করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।