পায়রা বন্দরে রাবনাবাদ চ্যানেল ড্রেজিংয়ে ব্যয় হবে ৪৭ লাখ ৮২ হাজার ইউরো
সোহেল রহমান : দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থে বাস্তবায়নাধীন প্রথম প্রকল্প পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেল ড্রেজিংয়ে ব্যয় হবে প্রায় ৪৭ লাখ ৮২ হাজার ইউরো।
বাংলাদেশি মুদ্রায় ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ মোট ব্যয় হবে ৫ হাজার ৬৯২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ড্রেজিং-এর কাজটি করবে বেলজিয়াম ভিত্তিক কোম্পানি ‘জেন ডি নাল’।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ভুক্ত পায়রা বন্দরের ‘রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইন্টেন্যান্স ড্রেজিং’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই পরীক্ষা অনুযায়ী, অতি অল্প সময়ে বন্দরে জাহাজ চলাচল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পায়রা বন্দরে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১০০ থেকে ১২৫ মিটার প্রশস্ত ও ১০ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার একটি চ্যানেল খননের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য বন্দরে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য, ৩০ মিটার প্রস্থ ও ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট বিশিষ্ট ৪০ হাজার ডিডব্লিউটি বহন ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজের চলাচল নিশ্চিত করা।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি প্রথমে ‘সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব’ (পিপিপি)-এর মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বেসরকারি অংশীদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বহির্ভূত ও ব্যাংক ঋণ সংশ্লিষ্ট কিছু অতিরিক্ত দায়ভার নিয়ে মত পার্থক্য দেখা দেয়ায় প্রকল্পটি এখন নিজস্ব অর্থায়নে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, পিপিপি’র আওতায় ট্যাক্স ও ভ্যাট ছাড়াই ক্যাপিটাল ড্রেজিং-এর কাজে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০২ কোটি ই্উরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। নিজস্ব অর্থায়নে কাজটি করায় এতে প্রায় ৫৩ শতাংশ ব্যয় কমছে।
নিজস্ব অর্থায়নে পায়রা বন্দর ড্রেজিং-এর কাজ সম্পাদনে সম্প্রতি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থে গঠিত ‘বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল’ থেকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ‘পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ’-কে ৫ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা প্রদানের একটি ঋণচুক্তি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সোনালী ব্যাংকের মধ্যে একটি ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি সই হয়েছে। এ ঋণের সুদের হার ২ শতাংশ, ১০ বছর মেয়াদে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
সূত্র জানায়, নিজস্ব অর্থায়নে পায়রা বন্দরের ড্রেজিং-এর কাজ বাস্তবায়নে সময় ধরা হয়েছে তিন বছর (০১ মে ২০২১ থেকে ৩০ এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত) এবং সর্ব সাকুল্যে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৫৩৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।
জানা যায়, ইতোপূর্বে রাবনাবাদ চ্যানেলের নাব্যতা কমে যাওয়ার কারণে কয়লাবাহী জাহাজ চলাচল বিঘিœত হওয়ায় পিপিপি’র আওতায় বাস্তবায়নাধীন মাতারবাড়ি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড’ (বিসিপিসিএল) কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়নে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে রাবনাবাদ (ইনার ও আউটার) চ্যানেলের ৫৭ কিলোমিটার অংশে -৬.৩ মিটার সিডি গভীরতায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘বিসিপিসিএল’-এর মতে, রাবনাবাদ চ্যানেলে ন্যূনতম -৬.৩ মিটার সিডি গভীরতা বজায় রাখতে রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং পরিচালনা অত্যন্ত জরুরী।
ওই ড্রেজিং-এর গত বছর অক্টোবর-নভেম্বরে রাবনাবাদ চ্যানেলের বিভিন্ন অংশে বিচ্ছিন্নভাবে প্রায় ১ দশমিক ৪ কিলোমিটার অংশে সিলটেশন দেখা দেয়। এর ফলে চ্যানেলের নাব্যতা হ্রাস পায়। এমতাস্থায় গত বছর শেষ দিকে ৪৩৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের (ইনার ও আউটার) জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।