কৃষি ব্যাংকের বিতরণ ১ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা ১১ মাসে কৃষি প্রণোদনার তিন হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ
মো. আখতারুজ্জামান : করোনায় যাতে কৃষি পণ্য উৎপাদন ব্যাহত না হয় সে লক্ষ্যে কৃষিখাতের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এ ঋণ বিতরণে শুরু থেকেই ব্যাংকগুলোর মধ্যে অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। এ তহবিল থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন হাজার ৫৬৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এ সময়ের মধ্যে এক লাখ ৫১ হাজার ৭১৭ জন কৃষক এ ঋণ পেয়েছে। যা মোট প্রণোদনা ঋণের ৭১ শতাংশ। বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক একাই বিতরণ করেছে ১ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি মাসের মধ্যেই এ তহবিলের ঋণ বিতরণ করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। সে হিসেবে এক মাসেই দেড় হাজার কোটি টাকার মতো ঋণ বিতরণ করতে হবে। ঋণের অর্থ বরাদ্দ পাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে অধিকাংশেরই ঋণ বিতরণের হার ৫০ শতাংশের নিচে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাকি অর্থ বিতরণ করা সম্ভব নয়।
কৃষি ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ব বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রথমে কৃষি প্রণোদনা ঋণের ১ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পায়। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিতরণ করে। পরে আবার ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রণোদনার ঋণের চাহিদ দেয়। দ্বিতীয় ধাপে তাদেরকে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সেখান থেকে তাদের আর মাত্র ৩৯ কোটি টাকা বিতরণ বাকি রয়েছে। সেই হিসেবে ব্যাংকটি কৃষি প্রণোদনা ঋণ বিতরণ করেছে ১ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা।
গত বছরের ১৩ এপ্রিল কৃষি খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিলের ঋণ বিতরণের সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১১ মাসে তিন হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। সেই হিসেব বাকি রয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এ তহবিলের আওতা নির্ধারণ করা হয়Ñ মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাত। গ্রাহক পর্যায়ে এ ঋণের সুদ হার নির্ধারণ করা হয় ৪ শতাংশ। কৃষি খাতে ঘোষিত প্রণোদনার নীতিমালা অনুযায়ী এই তহবিলের আওতায় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্ধারিত ১ শতাংশ সুদে পুনরর্থায়ন সুবিধা পাবে। ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ এ তহবিলের ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১৮ মাস।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া জানান, আমরা প্রথম থেকেই পরিকল্পনা করি কিভাবে এ ঋণ বিতরণ করা যায়। সেইসঙ্গে যাতে দ্রুত ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা যায় সে জন্য একটি অনলাইন মনিটরিং কার্যক্রম হাতে নেই। ফলে প্রতিদিন ঋণ বিতরণে চিত্র আমরা পাই। কোনো শাখা বা জোনের কি অবস্থা তা আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারেন। সেইসঙ্গে কোনো শাখা বা জোনের কি করা উচিৎ সেই সিদ্ধান্ত তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়। এতে আমাদের কাজের পরিমাণ কমেছে। আমাদের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছি।
আলী হোসেন প্রধানিয়া জানান, আমাদের প্রথম বরাদ্দকৃত প্রণোদনা ঋণের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিতরণ করি। আমরা অর্থের চাহিদা দিলে দ্বিতীয় পর্যায় ৫০০ কোটি টাকা দেয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই ঋণের আর মাত্র ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ বাকি রয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই এই ঋণ বিতরণ করা যাবে।
শুরুতে করোনা আতঙ্ক, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে এ তহবিলের ঋণের চাহিদা কম ছিল। পরে এ তহবিলের ঋণের চাহিদা বাড়লেও ব্যাংকের অনাগ্রহের কারণে ঋণ বিতরণে গতি আসেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই তহবিলের ঋণ বিতরণে গতি আনতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়ায় প্রথম দফায় সময়সীমা ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ওই সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১ মার্চ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বোশেষ তথ্যমতে, মোট ৪৩ ব্যাংক এই তহবিলের আওতায় ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৩ ব্যাংক তাদের টার্গেটের ৫০ শতাংশও ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। এই সময়ে দুটি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশের কম ঋণ বিতরণ করেছে এমন ব্যাংকের সংখ্যা চারটি। এ ছাড়া ২০ থেকে ৩০ শতাংশের কম ঋণ বিতরণ করা ব্যাংকের সংখ্যা ছয়টি। ৩০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশের নিচে আছে আরো ছয়টি। আর ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশের নিচে রয়েছে পাঁচটি। তবে এ সময়ে কয়েকটি ব্যাংক ঋণ বিতরণে বেশ ভালো করেছে। এ সময়ে ৮০ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ করেছে এমন ব্যাংকের সংখ্যা প্রায় ১৩। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শতভাগের বেশি প্রণোদনা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
করোনার কারণে প্রণোদনা ঋণর পাশাপাশি কৃষিখাতের অন্য সব ঋণের সুদহার ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেয়ার নিধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত কৃষক পর্যায়ে সব ধরনের ঋণের সুদহার হবে ৪ শতাংশ। আগে কৃষিঋণের সাধারণ সুদহার ছিল ৯ শতাংশ। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও
কৃষি ব্যাংকের বিতরণ ১ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা
মো. আখতারুজ্জামান : করোনায় যাতে কৃষি পণ্য উৎপাদন ব্যাহত না হয় সে লক্ষ্যে কৃষিখাতের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এ ঋণ বিতরণে শুরু থেকেই ব্যাংকগুলোর মধ্যে অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। এ তহবিল থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন হাজার ৫৬৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এ সময়ের মধ্যে এক লাখ ৫১ হাজার ৭১৭ জন কৃষক এ ঋণ পেয়েছে। যা মোট প্রণোদনা ঋণের ৭১ শতাংশ। বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক একাই বিতরণ করেছে ১ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি মাসের মধ্যেই এ তহবিলের ঋণ বিতরণ করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। সে হিসেবে এক মাসেই দেড় হাজার কোটি টাকার মতো ঋণ বিতরণ করতে হবে। ঋণের অর্থ বরাদ্দ পাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে অধিকাংশেরই ঋণ বিতরণের হার ৫০ শতাংশের নিচে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাকি অর্থ বিতরণ করা সম্ভব নয়।
কৃষি ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ব বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রথমে কৃষি প্রণোদনা ঋণের ১ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পায়। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিতরণ করে। পরে আবার ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রণোদনার ঋণের চাহিদ দেয়। দ্বিতীয় ধাপে তাদেরকে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সেখান থেকে তাদের আর মাত্র ৩৯ কোটি টাকা বিতরণ বাকি রয়েছে। সেই হিসেবে ব্যাংকটি কৃষি প্রণোদনা ঋণ বিতরণ করেছে ১ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা।
গত বছরের ১৩ এপ্রিল কৃষি খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিলের ঋণ বিতরণের সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১১ মাসে তিন হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। সেই হিসেব বাকি রয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এ তহবিলের আওতা নির্ধারণ করা হয়Ñ মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাত। গ্রাহক পর্যায়ে এ ঋণের সুদ হার নির্ধারণ করা হয় ৪ শতাংশ। কৃষি খাতে ঘোষিত প্রণোদনার নীতিমালা অনুযায়ী এই তহবিলের আওতায় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্ধারিত ১ শতাংশ সুদে পুনরর্থায়ন সুবিধা পাবে। ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ এ তহবিলের ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১৮ মাস।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া জানান, আমরা প্রথম থেকেই পরিকল্পনা করি কিভাবে এ ঋণ বিতরণ করা যায়। সেইসঙ্গে যাতে দ্রুত ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা যায় সে জন্য একটি অনলাইন মনিটরিং কার্যক্রম হাতে নেই। ফলে প্রতিদিন ঋণ বিতরণে চিত্র আমরা পাই। কোনো শাখা বা জোনের কি অবস্থা তা আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারেন। সেইসঙ্গে কোনো শাখা বা জোনের কি করা উচিৎ সেই সিদ্ধান্ত তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়। এতে আমাদের কাজের পরিমাণ কমেছে। আমাদের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছি।
আলী হোসেন প্রধানিয়া জানান, আমাদের প্রথম বরাদ্দকৃত প্রণোদনা ঋণের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিতরণ করি। আমরা অর্থের চাহিদা দিলে দ্বিতীয় পর্যায় ৫০০ কোটি টাকা দেয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই ঋণের আর মাত্র ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ বাকি রয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই এই ঋণ বিতরণ করা যাবে।
শুরুতে করোনা আতঙ্ক, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে এ তহবিলের ঋণের চাহিদা কম ছিল। পরে এ তহবিলের ঋণের চাহিদা বাড়লেও ব্যাংকের অনাগ্রহের কারণে ঋণ বিতরণে গতি আসেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই তহবিলের ঋণ বিতরণে গতি আনতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়ায় প্রথম দফায় সময়সীমা ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ওই সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১ মার্চ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বোশেষ তথ্যমতে, মোট ৪৩ ব্যাংক এই তহবিলের আওতায় ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৩ ব্যাংক তাদের টার্গেটের ৫০ শতাংশও ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। এই সময়ে দুটি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশের কম ঋণ বিতরণ করেছে এমন ব্যাংকের সংখ্যা চারটি। এ ছাড়া ২০ থেকে ৩০ শতাংশের কম ঋণ বিতরণ করা ব্যাংকের সংখ্যা ছয়টি। ৩০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশের নিচে আছে আরো ছয়টি। আর ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশের নিচে রয়েছে পাঁচটি। তবে এ সময়ে কয়েকটি ব্যাংক ঋণ বিতরণে বেশ ভালো করেছে। এ সময়ে ৮০ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ করেছে এমন ব্যাংকের সংখ্যা প্রায় ১৩। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শতভাগের বেশি প্রণোদনা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
করোনার কারণে প্রণোদনা ঋণর পাশাপাশি কৃষিখাতের অন্য সব ঋণের সুদহার ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেয়ার নিধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত কৃষক পর্যায়ে সব ধরনের ঋণের সুদহার হবে ৪ শতাংশ। আগে কৃষিঋণের সাধারণ সুদহার ছিল ৯ শতাংশ। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও