প্রণোদনা প্যাকেজ সঠিকভাবে বন্টন হলে এসএমই খাত ঘুরে দাঁড়াবে
ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ
গত বছরের মার্চে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে বাংলাদেশ কিছুটা মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলো। কারণ বাংলাদেশে সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগেই চীন, আমেরিকা ও ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিলো। ফলে কী করতে হবে, আর কী করতে হবে না সে সম্পর্কে সরকার ও জনগণ একটা ধারণা পেয়েছিলো এবং সে অনুযায়ী তারা শুরুতেই পদক্ষেপ নিয়েছিলো। সরকার যথাযথভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলো বলেই তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ করোনা মোকাবেলায় ভালো অবস্থানে ছিলো।
করোনার শুরুতে স্বাস্থ্যখাতের ভঙ্গুর অবস্থা, হাসপাতগুলোর সক্ষমতা, অর্থনৈতিক অচলাবস্থা ও ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়াসহ যে সমস্যাগুলো ছিলো তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু এক বছর পরে করোনাভাইরাসের যে নতুন রূপ নিয়ে আসছে, তা দেখে মনে হচ্ছেÑ আমরা এখনো অন্ধকারে আছি। কারণ এই ভাইরাসের চিকিৎসা বা প্রতিরোধ কী হবে তা স্পষ্টভাবে ধরা যাচ্ছে না। তবে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি সঠিকভাবে কাজ করা যায়, তাহলে করোনার নতুন ধরনও বাংলাদেশের পক্ষে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। অতীতের সফলতা ও ব্যর্থতা চিহ্নিত করতে পারলে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।
করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিলো, যা পরবর্তী সময়ে বাস্তবায়ন সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু বোঝা যায়নি। সে সময় করোনার র্যাপিড টেস্ট, আইসিইউ বৃদ্ধি, করোনার বিশেষ হাসপাতাল, করোনার সার্টিফিকেট জালিয়াতি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির নিয়ে আলোচনা হয়েছিলো। করোনা মোকাবেলার জন্য যেসব পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা বলা হয়েছিলো, তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। প্রথম দিকে যে অসহায় অবস্থায় আমরা ছিলাম, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়েও একই অবস্থায় আছি, যা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। গত একবছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সমস্যাগুলোর যদি একটি স্থায়ী সমাধান করা হতো, তাহলে আজকে এই পরিস্তিতি এড়ানো যেতো। প্রণোদনা যাদের পাওয়ার কথা ছিলো তারা পায়নি। করোনার প্রণোদনা সঠিকভাবে বন্টন হলে এসএমই খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
গত একছরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশ করোনা মোকাবেলায় অবকাঠামো উন্নয়ন করেছে বলে তারা বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারছে কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। দুর্বল অবকাঠামোর কারণে করোনা মোকাবেলায় আগের মতোই ধুকছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সবাইকে আবার মনোবল ফিরিয়ে আনতে হবে। করোনা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় সরাঞ্জম সরবরাহ করতে হবে। পাশাপাশি অযথা খরচ কমাতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখানোর জন্য সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছিলো, যা পরিস্থিতি অবনতির জন্য দায়ী। মানুষকে ঘরে ফিরিয়ে এনে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। করোনার টেস্ট যাতে ঠিকভাবে হয়, রিপোর্ট যাতে সময়মতো পায়, হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা ঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে কিনা, প্রণোদনার টাকা আরও দেওয়া যায় কিনা সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। প্রথমবার গ্রামের মানুষ ও যুব সম্প্রদায় মানুষরা অক্রান্ত হয়নি, কিন্তু এখন হচ্ছে, তাই অর্থনীতিকে বাঁচাতে তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে।
পরিচিতি : সাবেক চেয়ারম্যান, এনবিআর