‘হঠাৎ করে লকডাউন না দিয়ে দোকানপাট সীমিত আকারে খোলা রাখা যেতো’
আমিরুল ইসলাম : করোনা মহামারির কারণে ঢাকার চারজন দরিদ্র মানুষের তিনজনই এখন হতদরিদ্র। ২০১৮ সালে যেখানে প্রতি ১০০ জনে ১৪ জন দরিদ্র মানুষ ছিলো মাত্র দুই বছরের মাথায় সেই সংখ্যা বেড়ে ৩৯ জন হয়েছে। হতদরিদ্রের সংখ্যা এখন ১০০ জনে ৬ জন থেকে চার গুণের বেশি বেড়ে ৩৯ জন হয়েছে। এটা শুধু ঢাকার চিত্র। গত দুই বছর সারা দেশেই হতদিরদ্রের সংখ্যা বেড়েছে। নতুন করে দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ার কারণে এসব হতদরিদ্র মানুষের জন্য কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে হঠাৎ করেই লকডাউন ঘোষণার সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন করে একসপ্তাহের জন্য যে লকডাউন দেওয়া হয়েছে এটা পালন করতে কষ্ট হবে কিন্তু করোনা নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে এই লকডাউন দেওয়া হয়েছে। তবে আমি কোনোক্রমেই এই লকডাউন বাড়ানোর পক্ষপাতি নই। হঠাৎ করে লকডাউন না দিয়ে দোকানপাট সীমিত আকারে খোলা রাখতে পারতো। ছোট ছোট দোকানপাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচাকেনা করার কথা বলতে পারতো। বড় দোকানপাটগুলোতে সীমিত জনগণ প্রবেশ করার নিয়ম রেখে চালু রাখতে পারতো। আমাদের দেশের লোকজন মুখে স্বাস্থ্যবিধির কথা বলে কিন্তু মানে না। এখানে আবার লোকজনকে শুধু দোষারোপ করলেও হবে না, তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে। পৃথিবীর কোনো দেশের মানুষই পুরোপুরিভাবে আইনশৃঙ্খলা মানে না। আমাদের প্রশাসনকে সক্রিয় হতে হবে।
তিনি বলেন, শহরে দরিদ্রদের জন্য ইনটেনসিভের ব্যবস্থা করা উচিত। তাদের জন্য নামমাত্র মূল্যে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টিকে জরুরি করতে হবে যেমন দুর্যোগের সময় করা হয়। বন্যার সময় যেমন লঙ্গরখানা খোলা হয়, এখানে এমনটা সম্ভব নয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য সরকারের অর্থ ব্যয় করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গণপরিবহন সীমিত রাখা যেতে পারে। ব্যাংকগুলোকে কম লোক দিয়ে পারিচালনা করা ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা রাখা যেতে পারে। গার্মেন্টসে পোশাক শ্রমিকরা এমনভাবে কাজ করে যে একজন কর্মী যদি কাজ না করে তাহলে ফিনিশিং পর্যন্ত জামেলা হবে। তাদের উপযুক্ত পোশাক ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করার ব্যবস্থা করতে হবে। কোনোক্রমে টয়লেট ও খাওয়া-দাওয়ার সময় যেন ভিড় না করে সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক সপ্তাহ পরেও এই নিয়মনীতিগুলো পালন করতে হবে।
করোনা কিছুটা কমে যাওয়ার কারণে সরকারের ও সাধারণ মানুষের উদাসীনতা ছিলো। লাখ লাখ লোক পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় করেছে। করোনা বাড়বে এটা ধারণা ছিলো কিন্তু আগে থেকে কোনোকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। আমাদের যারা এক্সপার্ট রয়েছে তারাও শক্তভাবে নির্দেশনা দেয়নি। করোনা বেড়ে যাওয়ার পর তারা বলছে, আমরা বলেছিলাম, মনে করেছিলাম করবো। হওয়ার আগে বলতে হবে সবকিছু, শুরু হওয়ার পর এটা সবাই বলতে পারবে।