আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ১
মৃত ও সংক্রমণে রেকর্ড ভাঙছে করোনা ঢিলেঢালা শেষে এবার কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে সরকার
শোভন দত্ত ও কেএম নাহিদ : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে এবার কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে সরকার। প্রথম দফায় আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সাতদিনের জন্য এ লকডাউন দেয়া হবে।
এ সময়ে জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ থাকবে। এছাড়া বন্ধ থাকবে গণপরিবহন, শিল্পকারখানাও।
শুক্রবার দুপুরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এ তথ্য জানান। আগামী রোববারের মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
এর আগে সকালে সরকারি বাসভবনে ব্রিফিংয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে করোনা ভাইরাস ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। কিন্তু এতেও কমেনি জনগণের উদাসীনতা। এ অবস্থায় জনস্বার্থে সরকার আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়ে সক্রিয় চিন্তা ভাবনা করছে।
এদিকে, করোনায় গত চব্বিশ ঘণ্টায় ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ৭ হাজার ৪৬২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষাও হয়েছে ৩১ হাজার ৬৫৪ জনের। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
এ পর্যন্ত দেশে মোট ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৪ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৯ হাজার ৫৮৪ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৫৪১ জন। বৃহস্পতিবার করোনায় আক্রান্ত ৭৪ জনের মৃত্যু ও ৬ হাজার ৮৫৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের কথা জানায় সরকার। গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর থেকে শনাক্তের হার কমতে শুরু করে।
এর আগে গত ৪ এপ্রিল এক অনুষ্ঠানে সারাদেশে এক সপ্তাহ (৫-১২ এপ্রিল) গণপরিবহন, শপিংমল, বিনোদনকেন্দ্রসহ সবকিছু বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এক সপ্তাহের কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু বিধিনিষেধ কার্যকরের তিনদিনের মাথায় গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকাসহ দেশের সব সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন সেবা চালু রাখার অনুমতি দেয়া হয়।
এরপর বৃহস্পতিবার শপিংমল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় সরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা থাকবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে বেচাকেনা করতে হবে। গতকাল থেকে সিদ্ধান্তটি কার্যকর হয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিন্ন প্লাটফর্ম ডি-৮ এর আগামী দুই বছরের জন্য সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগ ও জনগণের পক্ষে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘এ অর্জন শেখ হাসিনার নেতৃত্বের স্বীকৃতি। এ অর্জন দেশের মানুষের অর্জন এবং শেখ হাসিনার সাফল্যের মুকুটে আরও একটি সোনালী পালক যুক্ত হলো।’
উল্লেখ্য, গত জুন থেকে আগস্ট- এই তিন মাস করোনার সংক্রমণ ছিল তীব্র। মধ্যে নভেম্বর-ডিসেম্বরে কিছুটা বাড়লেও বাকি সময় সংক্রমণ নি¤œমুখী ছিল। এ বছর মার্চে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে এবার সংক্রমণ বেশি তীব্র। মধ্যে কয়েক মাস ধরে শনাক্তের চেয়ে সুস্থ বেশি হওয়ায় দেশে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা কমে আসছিল। কিন্তু মার্চ মাস থেকে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যাও আবার বাড়তে শুরু করেছে।
কোনও দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঠিক করা কিছু নির্দেশক থেকে বোঝা যায়। তার একটি হলো রোগী শনাক্তের হার। টানা দুই সপ্তাহের বেশি রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। এ বছর ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে ছিল। দুই মাস পর গত ১০ মার্চ দৈনিক শনাক্ত আবার হাজার ছাড়ায়। এরপর দৈনিক শনাক্ত বাড়ছেই।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২৯ মার্চ বেশ কিছু বিধিনিষেধসহ ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। এর মধ্যে ঘরের বাইরে গেলে মাস্কের ব্যবহার অন্যতম। কিন্তু সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকলেও জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে এখনো উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই।
সূত্র : জাগোনিউজ, বিডিনিউজ, সময়টিভি অনলাইন। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও