রোজার আগে চড়া নিত্যপণ্যের বাজার
মাসুদ মিয়া : লকডাউনের প্রভাবে রাজধানীতে সপ্তাহ ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম বাড়লেও কিছুটা কমেছে মুরগির ও পেঁয়াজের দাম। এছাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে তেল ও চালের দাম। বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটার বিক্রয় হচ্ছে ১৩৫ টাকা থেকে ১৪০ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার পাম ওয়েল বিক্রি হচ্ছে ১০৮ টাকায়। প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চালের দাম চড়া। এক কেজি মোটা চাল কিনতেই এখন খরচ হচ্ছে ৪৮-৫২ টাকা। আরেকটু ভালো মানের চাল কিনতে হলে ভোক্তাকে গুণতে হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা। ৫ ভাই ঘাটলেন রোকনপুর ব্যবসায়ী নাজমুল হুসাইন বলেন, চাল তেলের দাম কমছে না অনেক দিনে ধরে একই দামে রয়েছে।
সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও তা এখনও সম্ভব হয়নি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়। পটল, বেগুন, শিম, ধুন্দল, বরবটি, ঢেঁড়স, লাউ, টমেটোসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। করোনায় বিধিনিষেধ আরোপের কারণে সবজির গাড়ি কম আসায় এই দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। শবেবরাতের আগে ব্রয়লার মুরগি বিক্রয় হয়েছে ১৬৫ টাকা সি হিসাবে ব্রয়লার মুরগির কেজিতে কমেছে ১০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি সোনালী মুরগির দামও কমে। ৩২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া এই মুরগির দাম একবারে কমে ২৬০ থেকে ২৪০ টাকায় নেমে আসে। গত কয়েকদিনে মুরগির দাম আর পরিবর্তন হয়নি। আর দীর্ঘদিন ধরে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া লাল লেয়ার মুরগি এখনো ওই দামেই বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির দামের বিষয়ে নারিন্দা ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৫০ টাকা থেকে১৫৫ বিক্রি করেছি। এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সজনের ডাটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গত সপ্তাহে সজনের ডাটার কেজি বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে একমাত্র এই সবজিটির দাম কমেছে।
অপরদিকে পটল, বরবটি, বেগুন, ঢেঁড়সের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটির দাম বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা হয়েছে। ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
দাম বাড়ার তালিকায় থাকা বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শিমের দাম বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হয়েছে।
এর পাশাপাশি পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে ছিল।
বেশিরভাগ সবজির দাম বাড়লেও ফুলকপি ও বাঁধাকপি আগের মতো ৩০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ধুন্দল, চিচিঙ্গা কিনতেও ভোক্তাদের ৫০ টাকার ওপরে গুনতে হচ্ছে। বাজার ও মানভেদে ধুন্দলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে চিচিঙ্গা। শশা আগের সপ্তাহের মতো ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বাজার থেকে এখন শাক এক আঁটি কিনতে ১০ টাকা বা তার বেশি গুনতে হচ্ছে। পালং শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে লালশাক, সবুজ শাক, পাট ও কলমিশাক। পুঁই শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এক আঁটি ডাটা কিনতে লাগছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।
সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী কাশেম বলেন, বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ এমনিতেই কমে গেছে। এর সঙ্গে এখন লকডাউনের কারণে সবজির গাড়ি কম আসছে। এসব কারণেই সবজির দাম একটু বেড়েছে।
ঢাকায় সবজির গাড়ি আসতে সমস্যা হচ্ছে কি-না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সবজির গাড়ি আসতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে ব্যাপারীরাই মাল কম পাঠাচ্ছেন। মাল বেশি পাঠালে যদি ঠিকমতো দাম না পাওয়া যায়, তেমন আশঙ্কা করেই হয় তো ব্যাপারীরা মাল কম আনছেন। অধিকাংশ মাছ আগের দামেই বিক্রয় হচ্ছেভ গত সপ্তাহের মতো প্রতি কেজি রুই মাছের দাম (আকারভেদে) ১৮০ থেকে ৩৫০ টাকায়, মাগুর মাছ ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, মৃগেল ১১০ থেকে ১৫০ টাকায়, পাঙ্গাস ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, ইলিশ প্রতি কেজি (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে হাজার টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, কাতল ১৭০ থেকে ২৮০ টাকায়, ফোলি মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, পোয়া মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়, পাবদা মাছ ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায়, টেংরা মাছ ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়, টাটকিনি মাছ ১০০ টাকায়, তেলাপিয়া ১৪০ টাকায়, সিলভার কার্প ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও