হালদায় মা মাছের আনাগোনা প্রতীক্ষায় জেলেরা
অর্থনীতি ডেস্ক : এপ্রিল এবং মে মাসে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। তাই জেলেদের উদ্দীপনার শেষ নেই।
নদীই হয়ে উঠেছে তাদের আবাসস্থল। নদীর পাড়ে কাটছে সময়। নদীতে মা মাছের আনাগোনা দেখে তারা খুশিতে আত্মহারা।
ইতোমধ্যে জেলেরা ডিম সংগ্রহ করার জন্য নৌকা, জাল ও যাবতীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন খাল ও ছড়া থেকে নদীতে আসছে মা মাছ।
গতবছর ২২ মে হালদায় মা মাছ ডিম ছেড়েছিল। বাংলা বছরের চৈত্র-বৈশাখ মাসে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে এবং ঢলের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। সরকারের নানান পদক্ষেপের কারণে জীববৈচিত্র্যের উন্নতি হয়েছে হালদায়। ডিম ছাড়ার পরিবেশও তৈরি হয়েছে অনেকাংশে। গত বছর ২৫ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল। এবার সেই রের্কডও ভাঙতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘হালদার সার্বিক পরিস্থিতি ২০ বছরের মধ্যে সবদিক দিয়ে পজেটিভ। দূষণের পরিমাণ কম, মা মাছ সংরক্ষণে ছিল, প্রচুর পরিমাণে জাল উদ্ধার হয়েছে, এলাকার মানুষ অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। তবে প্রকৃতি এখনো আমাদের সাপোর্ট করেনি, আমাদের অনুকূলে নেই’।
তিনি আরও বলেন, মার্চের মধ্যে একটা বৃষ্টি হওয়ার প্রয়োজন ছিল। এপ্রিলের মধ্যে যদি ভরা পূর্ণিমায় বৃষ্টি হতো তখন মা মাছ ডিম ছেড়ে দিতো। কিন্তু সেটা হয়নি। যদি প্রকৃতি অনুকূলে থাকে এবং বৃষ্টি হয়, তাহলে একটা ভালো ফলাফলের আশা করা যায়। অতীতের রেকর্ডও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
রাউজান উপজেলা হালদা রক্ষা কমিটির সভাপতি ও হালদা থেকে ডিম সংগ্রহকারী রওশনগীর আলম বলেন, হালদা নদীতে প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষ দিকে এবং মে মাসে মা মাছ ডিম ছাড়ে। এ সময়টা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। আগ্রহ আর উদ্দীপনার শেষ থাকে না-কখন মা মাছ ডিম ছাড়বে। হালদা নদী আমাদের কাছে মায়ের মতো। এ নদীকে রক্ষা করতে আমরা সদা সচেষ্ট থাকি। আশাকরি বৃষ্টি হলে আমরা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি ডিম সংগ্রহ করতে পারবো।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, হালদা নদীকে রক্ষা করতে রাত-দিন হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ছিল। তাই আজ হালদা এ পর্যায়ে এসেছে।
তিনি বলেন, সারাবছর নদী থেকে মাছ শিকার নিষিদ্ধ থাকা, নিয়মিত অভিযানে অবৈধ জাল জব্দ, বালু উত্তোলন বন্ধ, ড্রেজার পরিচালনা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা বন্ধ থাকায় মা মাছের নিরাপদ বিচরণ অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে। তাছাড়া নন্দীরহাট সংলগ্ন একটি পেপার মিল ও হাটহাজারীর ১শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য হালদা নদীতে গিয়ে পড়া বন্ধ থাকায় মা মাছের ডিম ছাড়ার পরিবেশ অনুকূলে আছে। এ বছরও ডিম ছাড়ার পরিমাণ বাড়তে পারে। প্রত্যাশা করছি, এ বছর ডিম সংগ্রহের পরিমাণ অন্যান্য বছরকে ছাড়িয়ে যাবে। সূত্র : বাংলানিউজ