ডিসিসিআই’র প্রাক-বাজেট আলোচনা বাজেটে করোনা পরিস্থিতি উত্তরণে সুনির্দিষ্ট দিক-নিদের্শনা থাকা দরকার
সোহেল রহমান : বাজেটে করোনা পরিস্থিতি উত্তরণে সুনিদিষ্ট দিক-নিদের্শনা থাকা দরকার। সেই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিও বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি দেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে এবং এটিকে সকল জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।
শনিবার ‘ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল ২৪-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক ‘প্রাক-বাজেট আলোচনা : অর্থবছর ২০২১-২২’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ওয়েবিনারে ৪টি বিষয় ভিত্তিক আলোচনা করা হয়। এগুলো হচ্ছেÑ ‘আর্থিক খাত’, ‘শিল্প ও বাণিজ্য’, ‘ট্যাক্সেশন ও ভ্যাট’ ও ‘অবকাঠামো (জ্বালানি, লজিস্টিক ও স্বাস্থ্য)’।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে এবং এটিকে সকল জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। শুল্ক বা করের হার গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে না থাকলে, তা ব্যবসা-বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করবে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যাহত না করে কী হারে রাজস্ব বাড়ানো যায়Ñ এর একটি দিক-নির্দেশনা বাজেটে থাকা দরকার। করের হার ঘন ঘন বাড়ানো-কমানো ঠিক নয়। সাত থেকে ১০ বছরের জন্য একটি টেকসই ও সহনশীল কর কাঠামো দেশে বিনিয়োগ সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, ‘জিডিপি-তে করের অবদান বাড়ানো প্রয়োজন। বিভিন্ন খাতকে বিভিন্ন হারে কর অব্যাহতি দেয়ার কারণে জিডিপি-তে করের অবদান কমছে। করের হার নির্ধারণ ও সরকারের ব্যয়ের বিষয়ে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে, সেই সঙ্গে নাগরিকদের উপর আরোপিত কর সেই নাগরিকের নিকট গ্রহণযোগ্য কি নাÑ সেদিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন পর্যায়ে মূসক আদায়ের ফলে অনেক ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে এর হার বেড়ে যায়।’
ব্র্যাক-এর চেয়ারপার্সন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বাজেট শুধুমাত্র কর আহরণের বিষয় নয়, এটি সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকা-ের একটি রূপরেখা। বর্তমানে আমরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা করছি, যেটা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে এবং বাজেটে করোনা পরিস্থিতি উত্তরণের একটি সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা থাকতে হবে, সেই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিও বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের এসএমই খাতকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে এবং এসএমই খাতের জন্য আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতকল্পে ‘মাইক্রো ফাইন্যান্স ইন্সটিটিউশনস (এমএফআই) গুলোকে বিবেচনা করা যেতে পারে এবং প্রণোদনা প্যাকেজ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের নিকট পৌঁছানো যায়, সে লক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তৈরি পোশাক ও রেমিট্যান্সের পর আমাদের প্রবৃদ্ধির নিয়ামকগুলো কী হবেÑ সেগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। সেই সঙ্গে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির লক্ষ্যে একটি যুগান্তকারী পরিকল্পনা প্রয়োজন, যেখানে সরকার ও বেসরকারি খাত একযোগে কাজ করবে। এছাড়া স্বাস্থ্য খাত নিয়েও চিন্তা করতে হবে। বিশেষত গ্রামীণ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকল্পে বেসরকারি বিনিয়োগ খুবই জরুরি।’
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘সরকার ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থা, এ শিল্পায়নের বিকাশ ও উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে যেতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা পূরণে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ যেমনÑ আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর, আর্থিক খাত, শিল্প ও বাণিজ্য, জ্বালানী, যোগাযোগ ও অবকাঠামো এবং স্বাস্থ্যখাতকে বাজেটে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও